'বাজার করাই আমার শখ, তাই থলি হাতে বেরোচ্ছি'!

আমি এক ভদ্র লোককে বললাম দাদা আপনি তো কাল বাজারে এসেছিলেন। আজকে আবার বাজার করতে এসেছেন। তিনি জবাবে বললেন, 'দেখুন এটা আমার শখ। আমাকে ব্যাগ নিয়ে বেরতেই হবে।'

আমি এক ভদ্র লোককে বললাম দাদা আপনি তো কাল বাজারে এসেছিলেন। আজকে আবার বাজার করতে এসেছেন। তিনি জবাবে বললেন, 'দেখুন এটা আমার শখ। আমাকে ব্যাগ নিয়ে বেরতেই হবে।'

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
north 24 paragana hotspot

এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য প্রশাসন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যে মন্ত্রক আগেই রাজ্যের অন্য তিন জেলা ছাড়া এই জেলাকে হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত করেছে। করোনা সংক্রমণের হার এই সব জেলায় বেশি বলে মন্ত্রক মনে করছে। এই জেলার বেশ কিছু জায়গা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিধান নগর, মধ্যমগ্রাম, দক্ষিণ দমদম ও বেলঘড়িয়া এই চার জায়গায় বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। বাজার, রাস্তা, স্কুলগুলোতে স্যানিটাইজেশনের কাজ চলছে। ভিড় এড়ানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রে বাজার বন্ধ রাখা হয়েছে বা বাজার অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা সত্বেও বাজারে ভিড় করতে ছাড়ছেন না স্থানীয়রা।

Advertisment

ভিড় এড়ানোর জন্য বারাসতে মাছের আড়ত, বড় সবজির বাজার বন্ধ রাখা হচ্ছে। এই পুর এলাকায় ১৭ নম্বর ওয়ার্ড হটস্পট করা হয়েছে। সেখানে বাসিন্দাদের বাড়িতে সবজি পৌঁছানো হচ্ছে। শহরে চলছে স্যানিটাইজেশনের কাজ। এরইমধ্যে বাজারে বাজারে সচেতন করতে গিয়ে বিশেষ অভিজ্ঞতা হয়েছে বারাসত পুরসভার চেয়ারম্য়ান সুনীল মুখোপাধ্যায়ের। কেন ভিড় হচ্ছে বাজারে? সুনীলবাবু বলেন, "বাজারে সচেতন করতে গিয়ে আমার করুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি এক ভদ্র লোককে বললাম দাদা আপনি তো কাল বাজারে এসেছিলেন। আজকে আবার বাজার করতে এসেছেন। তিনি জবাবে বললেন, 'দেখুন এটা আমার হবি। আমাকে ব্যাগ নিয়ে বেরতেই হবে।' আমি অবাক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম। মানুষের মৃত্যু ভয়ও নেই। সে নিজে ভুগবে অন্য়কেও ভোগাবে। এর থেকে খারাপ অভিজ্ঞতা হতে পারে না।"

north 24 paragana hotspot চলছে স্যানিটাইজেশনের কাজ। এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ

বিধাননগর পুর এলাকায় অনেকেই থাকেন বিদেশে থাকেন। বিভিন্ন প্রয়োজেন আমেরিকা, লন্ডন, সিঙ্গাপুর এমনকী নাসা থেকে সেখানকার পুরসভার মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর কাছে ফোন আসছে। বাবা-মায়েরা এখানে রয়েছে, ছেলে বা মেয়ে থাকেন বিদেশে। লকডাউনের সময়ে অর্থ থাকলেও অনেকের তা-ও কাজে আসছে না। বিধাননগরের মেয়র বলেন, "এই সব বাড়ির বয়স্করা অনেকেই ডাক্তার দেখানো বা প্রেসার মাপার জন্য অনুরোধ করছেন। কেউ আবার ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে দেওয়ার জন্যও বলছেন। তারওপর হোম ডেলেভারির বিষয়টাও আছে। করুণাময়ী, এফ পি ব্লক, ডি এল ব্লক সহ বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ নজরদারি রয়েছে। এখানকার সমস্ত হাসপাতালে পিপিই কিট তুলে দেওয়া হয়েছে।

Advertisment

মধ্যমগ্রামে এক কাউন্সিলর করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে এসেছেন। ভিড এড়ানোর জন্য মধ্যমগ্রামের বাজার অন্যত্র সরানো হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে। কিন্তু তা সত্বেও দোলতলা, বাদু রোডে কেনাকাটা করতে গিয়ে সেভাবে সোশাল ডিস্টেন্সিং মানছেন না অনেকেই। মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান রথীন রায় জানান, ১০ নম্বর ওয়ার্ড কনটেইনমেন্ট করা হয়েছে। স্ক্রিনিং-এক কাজ হয়েছে। বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য ভ্যানে করে সবজির বাজার পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

north 24 paragana hotspot এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ

বরাহনগর পুরসভার ২৮ নম্বর ও ১১ নম্বর, এই দুই ওয়ার্ডের একাংশ হটস্পট করা হয়েছে বলে জানান পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক। তিনি বলেন, "জেলা স্বাস্থ্য দফতর, জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও পুরসভা এক সঙ্গে কাজ করছি। হটস্পট এলাকায় ফুড কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে মাছের গাড়ি, ফলের গাড়ি, সুফল বাংলার গাড়ি নিয়মিত যাচ্ছে। পুর এলাকায় নিয়মিত স্য়ানাটাইজেশন করা হচ্ছে। বাসিন্দারা অর্ডার দিলে পৌঁছে যাচ্ছে ওষুধ বা মুদিখানা দ্রব্য়ও।"

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ দপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী জেলায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার রয়েছে ৩১টি। তাছাড়াও প্রতি পৌর এলাকায় একটি করে ২৬ টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের ব্য়বস্থা করা আছে। কোভিড হাসপাতাল আছে মাটিয়া, কদম্বগাছি ও ব্যারাকপুরে। প্রায় ১০ হাজার মানুষ কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রয়েছেন (হোম কোয়ারানটাইন সেন্টার ধরে)। এই জেলার একদিকে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত। সেদিকে কড়া নজর রয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর। এ বিষয়ে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিশেষ সতর্ক করেছেন জেলা প্রশাসনকে।

West Bengal coronavirus