গরুমারায় সাফারি করতে এসে হাতির হানায় মৃত্যু হলো বাংলাদেশের জাতীয় দলের প্রচার সচিবের। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার জলপাইগুড়ি মর্গে ময়নাতদন্তের পর দেহ বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাইকমিশনে পাঠানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন।
গতকাল বিকেলে ডুয়ার্সের নাগরাকাটা থানা এলাকায় হাতির হানায় প্রাণ হারান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রচার সচিব সৈয়দ সাইমন বিন নূর (কনক), ৫০। জানা গেছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার লালমাটিয়া এলাকার বাসিন্দা তিনি। দলের পক্ষ থেকে ঢাকার কুষ্টিয়া এলাকার প্রচার সচিব ছিলেন সাইমন। পাশাপাশি লায়ন্স ক্লাবের সদস্য হওয়ার সুবাদে বর্ধমানের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ ছিল।
বর্ধমানের এক পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের বার্ষিক প্রকৃতি পাঠ শিবিরে যোগ দিতে সম্প্রতি ঢাকা থেকে সস্ত্রীক বর্ধমান আসেন সাইমন। সেখান থেকে ৯০ জনের একটি দল ঝালংয়ের দলগাওতে আসে। সেই দলেই ছিলেন সাইমন ও তাঁর স্ত্রী। বর্ধমানের বন্ধু কিরণচন্দ্র মণ্ডলের সঙ্গে ঝালংয়ে প্রকৃতি পাঠ শিবিরে গত ২৩ জানুয়ারি আসেন তাঁরা। ক্যাম্প চলার ফাঁকে শুক্রবার কয়েকজন মিলে গরুমারায় সাফারি করতে এসেছিলেন। সাফারি শেষে ঝালং ফেরার পথে বুনো হাতির ছবি তুলতে গেলে হাতির হামলায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সাইমনের।
এই নিয়ে এই অঞ্চলে গত পাঁচদিনে হাতির তাণ্ডবে পাঁচজনের মৃত্যু ঘটল। গত বৃহস্পতিবার সকালে জঙ্গলে খড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে হাতির হামলায় মৃত্যু হয় দুই মহিলার। জানা গেছে, লাটাগুড়ির বাসিন্দা সারথি মজুমদার ও গীতা সেন বুধবার দুপুরে খড়ি সংগ্রহ করতে জঙ্গলে যান। রাত হয়ে গেলেও তাঁরা না ফেরায় শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালে চুকচুকি নজর মিনার থেকে কিছু দূরে দুই মহিলার ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখতে পান বনকর্মীরা। বনদপ্তরের প্রাথমিক অনুমান, হাতির হামলায় মৃত্যু হয়েছে দুজনের। খবর পেয়ে মেটেলি থানার পুলিশ দেহ দুটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এছাড়াও গত মঙ্গলবার উদ্ধার হয় শুশেনা খালকো নামে ধূপগুড়ির মরাঘাটের এক বাসিন্দার দেহ। এবং বুধবার বিকেলে মৃতদেহ উদ্ধার হয় লতিফা বেগম নামে নাগরাকাটা এলাকার চাপড়ামারির এক বাসিন্দার।
সাইমনের মৃত্যুর ঘটনায় অনারারি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরী জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেলে একটি প্রাইভেট গাড়িতে চেপে কয়েকজন পর্যটক মূর্তি থেকে খুনিয়ার জঙ্গলের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে রাস্তার ধারে বুনো হাতি দাঁড়িয়ে ছিলো। হাতি দেখে গাড়ি থেকে নেমে হাতির কাছে গিয়ে ছবি তুলতে গেলে সে হামলা চালায়।
পরিবেশপ্রেমী সংগঠন স্পোর-এর সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ পান্ডে জানিয়েছেন, "খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা। আমরা বিভিন্ন সময় মানুষকে সচেতন করেছি জঙ্গলপথে গাড়ি থেকে নামা বা বন্যপ্রাণীর কাছে যাওয়া নিয়ে। তা সত্ত্বেও মানুষ আমাদের অনুরোধ শোনেন না। আমরা ফের প্রচারে নামব।"