উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গল থেকে ময়ূরের ডিম কুড়িয়ে এনে ডিম প্রতি ৫০০ টাকা হিসেবে বিক্রি করে একটি চক্র। তাদের থেকে এই যৎসামান্য দরে ডিম কিনে মুরগিকে দিয়ে তা দেওয়ানোর পর ময়ূরের ছানা ফুটিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চড়া দামে (সাত থেকে দশ হাজার টাকা) বিক্রি হচ্ছে, এমন খবর আসে টাস্ক ফোর্সের প্রধান সঞ্জয় দত্তর কাছে। গোপন সূত্রে এই খবর আসার পর নড়েচড়ে বসে টাস্ক ফোর্স। এবং গতকাল সংশ্লিষ্ট এলাকায় চালায় অভিযান।
শুক্রবার সঞ্জয়বাবু জানান, "আজ আমরা শিলিগুড়ি কর্পোরেশনের ৩৬ নং ওয়ার্ডের পরিতোষ মণ্ডলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি ময়ূর উদ্ধার করি। বাড়ির লোক আমাদের জানান, তাঁরা বাজার থেকে ডিম কিনে মুরগী দিয়ে ফুটিয়েছেন। তিনি বাড়িতে না থাকায় আমরা তাঁকে সাত দিনের নোটিশ দিয়েছি। সাত দিনের মধ্যে দেখা না করলে আমরা আইনানুগ ব্যাবস্থা নেব।"
অভিযান চালাচ্ছে এসটিএফ
তিনি আরও জানান, সীমিত বনকর্মী নিয়ে জঙ্গলের বিস্তীর্ণ এলাকায় সবসময় নজরদারি চালানো যেতে পারে না। এর সুযোগ নেয় এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী। এরা অত্যন্ত কম দামে এই ডিমগুলি কেনে, এর পরে মুরগী দিয়ে তা দিইয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে। এটা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের অধীনে অপরাধ।"
আরও পড়ুন: ন’কোটি টাকার তক্ষকের সূত্র ধরে মিলল বাংলাদেশ, মায়ানমারের যোগ
রাষ্ট্রীয় পাখি নিয়ে কোনোরকম ব্যবসা দেশের আইনে নিষিদ্ধ। বিস্ময়করভাবে, সরকারের কাছে দেশে ময়ূরের সংখ্যা সংক্রান্ত কোনো তথ্যই নেই। কিন্তু বিশ্ববিখ্যাত ময়ূরপুচ্ছের পালকের বাড়তে থাকা কদর এবং দামের ফলে বেড়ে গিয়েছে চোরা চালানের হারও, কারণ প্রাকৃতিক নিয়মে পুচ্ছ থেকে খসে পড়া পালকে আর কুলোচ্ছে না। কাজেই দেশে ময়ূরের সংখ্যা যে দ্রুত কমছে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
ভারতে ময়ূরের সংখ্যা নিয়ে আজ পর্যন্ত একটিই সমীক্ষা চালানো হয়েছে, তাও সেই ১৯৯১ সালে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের উদ্যোগে। জানা যায়, যে স্বাধীনতার সময় যত সংখ্যক ময়ূর দেশে ছিল, ১৯৯১ সালে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় তার অর্ধেকে। সরকারি আধিকারিক এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মীদের মতে, বিচরণক্ষেত্র কমে যাওয়ায় এবং চোরা শিকারিদের কল্যাণে সেই সংখ্যা আরও হ্রাস পেয়েছে।
ময়ূরের পালকের দ্রুত বাড়তে থাকা চাহিদায় শঙ্কিত হয়ে ভারত সরকারের পরিবেশ মন্ত্রক ২০১৩ সালে ঘোষণা করে যে ময়ূরের পালকের কেনাবেচা ও পাচার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।