শোকের মধ্যে কোনও উৎসব নয়! আর, সেই কারণে হড়পা বান-কাণ্ডের জেরে পুজো কার্নিভালই বাতিল হয়ে গেল জলপাইগুড়িতে। দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর দেওয়া স্বীকৃতি অনুযায়ী শুক্রবার সব জেলায় পুজো কার্নিভাল হওয়ার কথা ছিল। তার জেরে জেলায় জেলায় তুঙ্গে উঠেছে প্রস্তুতি। একইভাবে কার্নিভালের ব্যবস্থা করা হয়েছিল জলপাইগুড়িতেও। নবান্নের নির্দেশ সেই ব্যবস্থা করেছিল জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন।
কিন্তু, সেই আনন্দের পরিস্থিতিই বুধবার রাতে বদলে যায় শোকে। দশমীর রাতে প্রতিমা বিসর্জনের সময় মাল নদীতে হড়পা বান আসে। তাতে প্রাণ হারান আট জন। গুরুতর জখম অবস্থায় এখনও অনেকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আবার কাউকে ভর্তি করা হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। প্রায় ৭০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
এই ঘটনার জেরেই এবার নবান্নের নির্দেশে জলপাইগুড়ির পুজো কার্নিভাল বাতিল করে দেওয়া হল। কারণ, জলপাইগুড়িতে দুটি কার্নিভাল হওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যে একটি হওয়ার কথা ছিল জলপাইগুড়ি শহরে। অন্যটি হওয়ার কথা ছিল ময়নাগুড়িতে। কিন্তু, এই শোকের আবহে কানির্ভালের মত আনন্দ অনুষ্ঠান অনুচিত বলেই রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা মনে করছেন।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কার্নিভালের প্রস্তুতি নিয়ে নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকা, রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য, কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল, এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম-সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। বৈঠকে জলপাইগুড়ির ঘটনায় জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। এদিকে, আগামিকাল ঘটনাস্থলে যাচ্ছে বঙ্গ বিজেপির ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সেই দলে থাকছেন বিজেপির ৭ জন বিধায়ক এবং এক জন সাংসদ। তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ডিজিপি মনোজ মালব্যকে চিঠি দিয়েছে বিজেপি।
আরও পড়ুন- দারিদ্র্যের জ্বালায় অস্থির বিশ্ব, ভারতের অবস্থাও চরম, জানাল বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট
এই পরিস্থিতিতে জলপাইগুড়ির জেলাশাসক দেবর্ষি দত্ত বিসর্জনের স্থানে পর্যাপ্ত পুলিশের অভাবের কথা মানতে চাননি। পুলিশ সুপার বলেন, 'গত ২০ বছর ধরে ওখানে বিসর্জন হচ্ছে। কোনও দিন কোনও বিপর্যয় ঘটেনি।' কিন্তু, তারপরও এই ঘটনা ঘটে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাউকে জলে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিমা বিসর্জন হচ্ছে ক্রেনের মাধ্যমে।
বুধবার রাতের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও সব জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের জানিয়ে দিয়েছেন, প্রতিমা বিসর্জনের ঘাটে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে হবে। ভাসানের সময় চলব মাইকিং। কেউ যাতে নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে বা জলের কাছাকাছি যেতে না-পারে, সেদিকেও নজর রাখবে প্রশাসন।