নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, এইচআইভি আক্রান্ত বলায় প্রথম দু'বার ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ফিরিয়ে দেয়। এরপর বাধ্য হয়ে এইচআইভি গোপন করে তাঁকে ফের ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু পরীক্ষা-নিরক্ষার পর এইচআইভি সংক্রমণের কথা জেনে যাওয়ায় নানা টালবাহানা করে চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন বৃদ্ধার ছেলে। তিনি হাসপাতালের সুপারের কাছেও অভিযোগ করেছেন।
উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা ৬২ বছরের এই বৃদ্ধা এইচআইভি আক্রান্ত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এক মাস আগে পড়ে গিয়ে তাঁর বাঁ পা ও কোমরে আঘাত লাগে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর স্থানীয় চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, পা ও কোমরের হাড় ভেঙেছে। অতএব দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। এরপরই ওই বৃ্দ্ধাকে এনাআরএসে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃদ্ধার ছেলের অভিযোগ, “আমরা এনআরএসে মা-কে নিয়ে যাই। কিন্তু সত্য়ি কথা বলে বিপদে পড়ে যাই। মা যে এইচআইভি আক্রান্ত সে কথা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে জানিয়ে দিই। কিন্তু হাসপাতাল আমাদের পর পর ২ বার ফিরিয়ে দেয়। বাইরে চিকিৎসা করার মত সামর্থ আমাদের নেই। তাই ফের ৫ অক্টোবর এনআরএস-এ নিয়ে যাই। ’’ তিনি জানান, এবার ভর্তি করাতে গিয়ে এইচআইভির কথা গোপন রাখতে বাধ্য হই। ডাক্তারবাবুরা ভর্তি করে নেন। অস্ত্রোপচারের তারিখও ঠিক হয়। সরকারি চিকিত্সকদের নির্দেশেই নানা পরীক্ষা হয়। এরপর ডাক্তার ওই রিপোর্ট দেখেই জানতে পারে, আমার মা এইআইভি আক্রান্ত এবং পরিবারের সদস্যদের রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন।
ডাক্তার ওই বৃদ্ধাকে 'ছুটি' করিয়ে নিতে বলায় বিপদে পড়ে বৃদ্ধার পরিবার। কারণ, এই রোগীকে কোথায় নিয়ে যাবে তা বুঝে উঠতে পারে না। তাছাড়া, শুধু এইচআইভি আক্রান্ত বলে চিকিতসা হবে না, এমন তো হওয়া উচিত নয়। তখন নিরুপায় হয়ে বৃদ্ধার ছেলে ১৩ অক্টোবর পুরো ঘটনা লিখিতভাবে হাসপাতালের সুপারকে জানায়। এই চিঠিতে গুরুতর অভিযোগ করেন পরিবারের সদস্য়রা। অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, রিপোর্টে এইচআইভি সংক্রমণের কথা জানার পরই চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছে হাসপাতাল। রোগীকে একবার কেবিন আর একবার জেনারেল ওয়ার্ডে টানা হ্য়াঁচাড়া করা হয়েছে।
হাসপাতাল জানিয়েছে, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্রের খবর, এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য় ভবন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) প্রদীপ মিত্রের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, এই অভিযোগ স্বাস্থ্য ভবনে এলে তা খতিয়ে দেখা হবে। কেউ দোষী হলে কড়া ব্য়বস্থাও নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের বক্তব্য, এভাবে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া তো যায়ই না, তার ওপর ভর্তি করার পর চিকিৎসা বন্ধ করাও অপরাধ। সরকারি বা বেসরকারি কোনও হাসপাতালই এই কাজ করতে পারে না। এক বছর আগে কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজ এমনই এক এইচআইভি আক্রান্ত এক রোগীকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। সেক্ষেত্রেও পর পর দু'বার সোনারপুরের ওই যুবককে ফিরিয়ে দিয়েছিল মেডিক্যাল কলেজ। ওই যুবকের বুকে ক্ষত হয়েছিল। বিষয়টি নজরে আসতেই নড়েচড়ে বসেছিল কর্তৃপক্ষ। ওই যুবকের বোনের জেদের কাছে হার মেনেছিল হাসপাতাল কতৃপক্ষ। তারপর চিকিৎসা হয়েছিল। এখন দেখার এনআরএস কী করে। তবে অভিযোগ অনুযায়ী ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েও এইচআইভি রোগীর চিকিত্সার ক্ষেত্রে খোদ কলকাতা শহরের সরকারি হাসপাতেলই যদি এই চিত্র দেখা যায়, তাহলে গ্রাম বাংলার পরিস্থিতি কী হতে পারে তা সত্যিই আশঙ্কা বাড়ায়।