করোনার দাপট কিছুটা কমার সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। ইতিমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছুঁইছুঁই। উৎসব আবহে করোনা গ্রাফ নিন্মমুখী, তবে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও। ফি বছর রাজ্যে বর্ষার শেষে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া সহ বিভিন্ন পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
গতকালই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের এক স্বাস্থ্য কর্তার। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে আতঙ্ক যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কবে মিলবে ডেঙ্গু মুক্তি সেই উত্তরের আশায় দিন গুনছেন সকলে। তবে স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু কিছু নিয়ন্ত্রণে এলেও ফের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ডেঙ্গু বাড়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই এখন থেকেই যাবতীয় পদক্ষেপের পক্ষে জোরালো বার্তা দিয়েছেন তাঁরা।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ :-
ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর এবং সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠ-সহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পিছনে ব্যথা অনুভব হতে পারে। জ্বর হওয়ার চার বা পাঁচ দিনের সময় সারা শরীরে লালচে র্যাশ দেখা যায়। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব এমনকি বমিও হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়। এই অবস্থাটা যেকোনো সময় জটিল হয়ে উঠতে পারে। যেমন অন্য সমস্যার পাশাপাশি যদি শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। সঙ্গে মাথাঘোরা বুকে পেটে জল জমার মতও উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
চারিপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে :-
বাড়ির এবং এলাকার সর্বত্র পরিষ্কার রাখতে হবে। জল জমতে দেওয়া চলবে না। নর্দমা পরিষ্কার রাখুন। আগাছা বোন জঙ্গল এগুলো কেটে ফেলা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, মশা মারার কীটনাশক দিতে হবে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন:
ডেঙ্গু একটি পতঙ্গ বাহিত রোগ। ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর এবং সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকুন। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে কোন পরিস্থিতিতে ডাক্তারের কাছে যাবেন, জানাচ্ছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ঐশ্বর্য্যদ্বীপ ঘোষ।
• প্রচণ্ড জ্বর, দু-থেকে তিনদিন স্থায়ী হলে।
• শরীরের যেকোনও অংশে রক্তপাত হলে।
• শ্বাসকষ্ট হলে অথবা পেট ফুলে গেলে।
• প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।
• জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে।
• অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
• প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।
চিকিৎসা:
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে। যাতে ডেঙ্গিজনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়। ডেঙ্গু জ্বরটা আসলে গোলমেলে রোগ, সাধারণত লক্ষণ বুঝেই চিকিৎসা করা দরকার। এক্ষেত্রে যে নিয়মগুলি মেনে চলা আবশ্যিক।
• সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে।
• যথেষ্ট পরমাণে জল, ডাবের জল তরল খাবার স্যুপ জাতীয় খাবার খেতে হবে।
• জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল-জাতীয় ব্যথার ওষুধই যথেষ্ট। এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ব্যথার ওষুধ কোনোক্রমেই খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়বে।
• জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছাতে হবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আপনার দায়িত্ব:
• বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
• ফুলদানির জল নিয়মিত বদলাতে হবে, অব্যবহৃত কৌটো, ডাবের খোলা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে।
• এডিস মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য কোনো সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীরে ভালোভাবে কাপড় দিয়ে ঢেকে বের হতে হবে, প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের দরজা-জানালায় নেট লাগালে ভাল।
• দিনের বেলায় মশারি টানিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।
• মশা নিধনের স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
• ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে করে কোনো মশা কামড়াতে না পারে।
• একমাত্র সচেতনতা ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই এই মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব।