প্রায় ছয় ঘন্টা জিজ্ঞাসাবেদ শেষে ইডি দফতর ছাড়লেন তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান। ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সংবাদ মাধ্যমে এই অভিনেত্রী-সাংসদ বলেন 'আমি সব উত্তর দিয়ে দিয়েছি।'
ফ্ল্যাট প্রতারণা মামলায় এদিন তলব করা হয়েছিল বসিরহাটের সাংসদ নুসরতকে। কিন্তু প্রথম ডাকেই সিজিও কংপ্লেক্সের ইডি দফতরে পৌঁছে যান ১০টা ৪৩ মিনিটে। এরপর তাঁর পার্সোনাল ডিটেল ফর্মপূরণ প্রক্রিয়া চলে। খতিয়ে দেখা হয় অভিনেত্রীর আনা নথি। এরপর থেকেই ফ্ল্যাট প্রতারণা মামলায় অভিযুক্ত বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দল। ইডি সূত্রে খবর, দুটি পর্বে নুসরতকে জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে।
রিয়েল এস্টেট সংস্থার ডিরেক্টর থাকাকালীন কেন প্রতারণা? ডিরেক্টর হিসাবে তাঁর কী ভূমিকা ছিল? কত টাকা ও কেন ঋণ নিয়েছিলেন? ফেরৎ কীভাবে, কতদিনে দিয়েছিলেন, তার কোনও নথি রয়েছে কিনা? নুসরতকে জিজ্ঞাসাবাদে এইসবই জানতে চান ইডির আধিকারিকরা।
ফ্ল্যাট প্রতারণা মামলায় নাম জড়িয়েছে নুসরত জাহানের। যদিও ওই অভিযোগ উড়িয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ। আর্থিক তছরূপ মামলায় তাহলে কী নুসরতের ডাক পড়বে? জল্পনার মাঝেই এক অনুষ্ঠানে নায়িকার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর বন্ধু যশ বলেছিলেন কেন্দ্রীয় এজেন্সি নুসরতকে ডাকবে না। কিন্তু, ইডি-র তরফে গত সপ্তাহেই ডাক পড়েছিল নুসরতের। বলা হয়েছিল আজ সকাল ১১টায় তিনি যেন ইডি দফতরে আসেন। সেই তলবে সাড়া দিয়েছেন নুসরত। প্রথম ডাকেই নির্ধারিত সময়ের আগে পৌঁছে যান সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দফতরে। নানা দুর্নীতিতে নাম জড়ানো তৃণমূলের অন্যান্য সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়ক, নেতাদের যখন কেন্দ্রীয় এজেন্সির তলব পেয়েই প্রথমে হাজিরা এড়াতে দেখা গিয়েছে তখন নুসরত ব্যতিক্রম।
নুসরতের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ?
সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি রিয়েল এস্টেট সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন মুসরত জাহান। সেই সংস্থা সস্তায় ফ্ল্যাট বিক্রির নামে বহু মানুষের থেকে অর্থ নিয়ে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ যে, ওই প্রতারণার টাকাতেই দক্ষিণ কলকাতায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছিলেন নুসরত।
২০১১ সালে সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেডের পথ চলা শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সাল নাগাদ সেই কোম্পানি অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন বাংলা অভিনেত্রী নুসরত। ওই সংস্থায় নুসরতের পাশাপাশি অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন রাকেশ সিং নামে এক ব্যবসায়ী ও মডেল-অভিনেত্রী রূপলেখা মিত্র। নুসরতের পাশাপাশি এদিন রাকেশ সিংকেও তলব করা হয়েছে। বুধবার তলব করা হয়েছে রূপলেখাতে, তবে তিনি ইডিকে চিঠি দিয়ে না যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। দাবি করেছেন, নথি জোগাড়ে সময় লাগবে তাঁর।
কীভাবে প্রতারণা?
গড়িয়াহাট এলাকায় একটি আবাসন তৈরি করে তাঁদের কম দামে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মীদের এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় তারশোর বেশি অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের থেকে মাথা পিছু সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করে তুলেছিল সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড। কিন্তু ২০১৭ পর্যন্ত কোনও ফ্ল্যাট মেলেনি। তাঁদের বলা হয়, গড়িয়াহাটে ওই আয়তনের জমি পাওয়া যাচ্ছে না, হিডকোতে জমি দেওয়া হবে। তাতে ফ্ল্যাটের মাপও বড় হবে। টু বেডরুমের পরিবর্তে থ্রি বেডরুমের ফ্ল্যাট পাবেন তাঁরা। কিন্তু শেষমেশ তাঁরা কিছুই পাননি। তার পরই ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা জোটবদ্ধভাবে সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কোর্ট ওই সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে নুসরতকে ডাকলেও তিনি হাজিরা দেননি বলে অভিযোগ।
এরপর বিজেপি নেচা শঙ্কুদেব পন্ডার থরপরতায় ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পরামর্শে প্রতারিতরা ইডি-র কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে ইডি। তারপর তলব করা হয় নুসরতকে।
কী দাবি নুসরতের?
গত ৫ অগাস্ট সাংবাদিক বৈঠক করে অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। দাবি করেন, ওই সংস্থা থেকে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। ফ্ল্যাট কিনেছেন ওই সংস্থা থেকে নেওয়া ঋণের ঠাকায়। যা তিনি সুদ সহ মিটিয়েও দিয়েছেন। তবে নুসরতকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেডের অন্যতম ডিরেক্টর রাকেশ সিং। যা নিয়েই বিতর্ক চরমে।
আ
আরও পড়ুন- মমতা স্পেনে যাওয়ার আগেই একাধিক জেলাশাসক বদল! জানুন কোন জেলার দায়িত্বে কে?
আরও পড়ুন- পুলিশে বিরাট রদবদল মুখ্যমন্ত্রীর, ঢালাও বদলি SP-দের, কোন জেলায় দায়িত্বে কে?