ফ্ল্যাট দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকার প্রতারণায় নাম জড়িয়েছে বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানের। সেই ইস্যুতেই বুধবার মুখ খুললেন নুসরত। কলকাতা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে জবাব দিলেন তৃণমূল অভিনেত্রী সাংসদ। বললেন, 'যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তাদের থেকেই ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮৫ টাকার ঋণ নিয়েছিলাম। সেই টাকায় বাড়ি কিনেছি। ২০১৭ সালের ৬ মে সুদ-সহ ১ কোটি ৪০ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৯৫ টাকা ফেরত দিয়েছি কোম্পানিকে। ব্যাঙ্কের নথিও আমার কাছে আছে। ৩০০ শতাংশ চ্যালেঞ্জ করতে পারি যে, আমি দুর্নীতিতে যুক্ত নই। আমি এক পয়সা নিলেও এখানে আসতাম না।'
নুসরতের বিরুদ্ধে প্রায় ২৪ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে সোমবার ইডির দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। মঙ্গলবার তাতে সুর মিলিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই ইস্যুতে মঙ্গলবার নুসরত জানিয়েছিলেন যে, বিষয়টি আইনি বিষয়, তাই তিনি আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেই অভিযোগের জবাব দেবেন। সেই মত বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করেন সাংসদ।
প্রতারণা অভিযোগ বিতর্কে প্রেস ক্লাবে নুসরত বলেন, 'অনেকেই বলেছেন আমি কেন দু দিন চুপ করে ছিলাম। জানিয়ে রাখি, আমি আউটডোরে শুটিং-এ ছিলাম। অনেকে আমার বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছিলেন। তাঁদের অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত। আমি বাড়িতে ছিলাম না। শ্যুটিংয়ের জন্য গভীর রাতে বাড়ি ফিরেছি। তাই মঙ্গলবার কথা বলতে পারিনি।'
এরপরই নুসরত জাহানের দাবি, 'আমি আপনাদের কোনও সাফাই দিতে আসিনি। যারা ভুল করে, যাদের মনে ভয় থাকে, সাফাই তারা দেয়। যে মামলা বিচারাধীন, তাতে নাক গলানো উচিত নয়, তা সত্ত্বেও নানা ধরনের সমালোচনা হয়েছে। একটা মানুষের মুখ বিক্রি হয় বলে তাঁকে নিয়ে নিজেদের টিআরপি তুলবেন, এটা ঠিক নয়। ড্রয়িংরুম স্টোরি হয়েছে মিডিয়াতে। টিআরপি বেড়েছে। কোনও বিষয় না জেনে, আলোচনা করা উচিত নয়। আর একটু ধৈর্য ধরা উচিত ছিল।'
অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল সাংসদের দাবি, 'যে কোম্পানির সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম, সেই সংস্থা থেকে আমি ২০১৭ সালের মার্চ মাসে পদত্যাগ করেছি। অভিযোগ উঠেছে, আমার বাড়ি দুর্নীতির টাকায় কেনা। সেই অভিযোগের সাফাই আমি দেব। সংস্থা থেকে ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮৫ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। সেই ঋণ আমি সুদ সমেত ফেরত দিয়েছি। আমার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে তার উল্লেখ রয়েছে। এইসব ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টের প্রত্যেকটি প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আমি এমন কোনও কাজ করিনি। করবও না। আমি ৩০০ শতাংশ চ্যালেঞ্জ করতে পারি দুর্নীতির সঙ্গে কোনও যোগ যদি দেখাতে পারেন, তাহলে আপনারা যা বলবেন তাই হবে।' যদিও এদিন সেই ব্যাঙ্ক ডিটেলস নুসরত প্রকাশ করতে চাননি। কেন এই পদক্ষেপ? সাংবাদিকদের পাল্টা তিনি বলেছেন, 'আপনারা কি আপনাদের ব্যাঙ্ক ডিটেলস দেখাবেন, যে আমি দেখাব! আমার যা জমা দেওয়ার সেটা আদালতে জমা দেব।'
সাংসদের আর্জি, 'এই বিষয়টাকে কোনওভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়াবেন না। রাজনীতির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।'
কেন ওই নির্দিষ্ট সংস্থা থেকেই ঋণ নিলেন নুসরত? কীভাবে ডিরেক্টর হলেন? সেই প্রশ্ন উঠতেই মেজাজ হারান নুসরত জাহান। শুধু বলেন, 'আমি রাকেশজিকে চিনি অনেকদিন। তাই লোন নিয়েছিলাম। আমি ওই কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার ছিলাম না। এরপরও যদি আপনাদের আর গল্প বানাতে বানাতে হয় তাহলে তাই করুন।'
তড়িঘড়ি ১০ মিমিটের মধ্যে সাংবাদিক বৈঠক শেষ করে প্রেস ক্লাব ছাড়েন এই অভিনেত্রী সাংসদ।
নুসরত জাহানের সাংবাদিক বৈঠকের পরই পাল্টা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পান্ডা। তিনি বলেন, 'যে সংস্থার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে সেই মেসার্স সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেডের তিনি যে ডিরেক্টর ছিলেন তা মেনে নিয়েছেন অভিনেত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান। নুসরতের ডিরেক্টর থাকার সময়ই এই দুর্নীতি হয়েছে। উনি ওই সংস্থা থেকে টাকা তুলেছিলেন। দফায় দফায় ২৪ কোটি তুলেছেন। আর বলছেন ১ কোটি ১৬ লাখের কথা। কোন কোম্পানি নিজের ডিরেক্টরকে ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা ঋণ দেয়?' অবিলম্বে নুসরতকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন শঙ্কুদেব।