scorecardresearch

ওড়িষা থেকে বোচকা নিয়ে ১২ দিন ধরে হেঁটেই চলেছেন নির্মাণকর্মীরা

তথ্য়াভিজ্ঞ মহলের মতে, করোনা আবহ থেকে রক্ষা করতে অনাবাসীদের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে উড়ানে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেখানে এই পরিযায়ী শ্রমিকরা এখনও রাস্তাতেই দিন-রাত কাটাতে বাধ্য় হচ্ছে।

ওড়িষা থেকে বোচকা নিয়ে ১২ দিন ধরে হেঁটেই চলেছেন নির্মাণকর্মীরা
ছবি- মৌলিক মন্ডল

লকডাউন ঘোষণার পর থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফিরতে হেঁটেই চলেছেন। লকডাউনের ২৭ দিন পার হতে চললেও সেই বোচকা আর লোটাকম্বল নিয়ে পথ চলার দৃশ্য় যেন কিছুতে শেষ হতে চাইছে না।

দুদিন আগেই ১৫০ কিলোমিটারের হাঁটার ধকল সহ্য় করতে না পেরে ১২ বছরের এক কিশোরীর মৃত্য়ু হয়েছে ছত্তিশগড়ে। তবু বিরামহীন হাঁটা চলছেই। লকডাউনে বন্ধ রেল চলাচল। স্তব্ধ গনপরিবহণ। দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউনও সপ্তাহ পার করতে চলেছে। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের মাথায় বোচকা চাপিয়ে মাইলের পর মাইল পথ চলা বন্ধ হয়নি। এই পথ চলা পায়ে হেঁটে। পরিশ্রান্ত হলে পিচ রাস্তাতেই গা এলিয়ে দেওয়া। আবার রাতে রাস্তার পাশে মাথা গোঁজার ঠাই পেলে ভাল, না হলে খোলা আকাশের নীচেই নিশিযাপন। এভাবেই ১২ দিন পার করে দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের রাজু, আনোয়াররা। বুধবার তাঁদের দেখা মিলল নদিয়ার কল্য়ানীতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে।

ওড়িষার বিভিন্ন জায়গায় এঁরা নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। ওড়িষা থেকে যাচ্ছেন মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুর। পায়ে হেঁটে কলকাতা, নদিয়ার কল্য়ানী হয়ে বাড়ি ফিরছেন শ্রমিকের দল। শীর্ণকায় চেহারায় দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। ওড়িষার ৬ জনের সঙ্গে মাঝ পথে দেখা পরশী জেলা বীরভূমের আরও ৫ জনের। এই ১১ জন শ্রমিক হেঁটে চলেছেন বাড়ির উদ্দেশ্য়ে। প্রায় ৫০০ কিলোমিটার রাস্তা পার করেছেন। এখনও বাকি প্রায় ২০০ কিমি রাস্তা।

জঙ্গিপুরের বাসিন্দা রাজু মন্ডলের বক্তব্য়, “পায়ে হাঁটা ছাড়া আমাদের আর উপায় কী আছে? প্রথম দফার লকডাউনের শেষের দিকে আমরা রওনা দিই। একে খাবার-দাবারের অভাব, তারওপর হাতে টাকাকড়ি শেষ। ১২ দিন আগে পায়ে হেঁটেই যাত্রা শুরু করি। ক্লান্ত হলে একটু রাস্তাতেই শুয়ে-বসে জিরিয়ে নিচ্ছি। হাঁটতে হাঁটতে যেখানে রাত হচ্ছে সেখানে থেকে যাচ্ছি।” সঙ্গে তো খাবার কিছু নেই? রাজু বলেন, “আমাদের কাছে কিছুই নেই। পথিমধ্য়ে যেখানে রাত কাটিয়েছি সেখানে স্থানীয় মানুষ খাবারের ব্য়বস্থা করে দিয়েছেন। সবে আজ কল্য়ানী পার করছি। বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে।” শাহনওয়াজের কথায়, “পথই আমাদের পথ দেখাচ্ছে। রাস্তায় এঁদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। তারপর আমরা সবাই একসঙ্গেই হাঁটছি। আমাদের বাড়ি বীরভূমে। ওঁরা পাশের জেলায় থাকেন।”

লকডাউন শুরু হওয়ার দিন থেকে বিভিন্ন রাজ্য়ের পরিযায়ী শ্রমিকরা শয়ে শয়ে কিলোমিটার পায়ে হেঁটে চলেছে। এক রাজ্য় থেকে অন্য় রাজ্য়। তার যেন কোনও বিরাম নেই। অবিরাম সে পথচলা। কেন্দ্র শুধু নয়, রাজ্য় সরকারগুলো হাজারো প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্য়বস্থা করতে বদ্ধপরিকর বিভিন্ন সরকার। বুধবার দুদফায় লকডাউনের ২৭ দিন। এখনও পথে নামলেই পরিযায়ী শ্রমিকদের এই দৃশ্য় দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তথ্য়াভিজ্ঞ মহলের মতে, করোনা আবহ থেকে রক্ষা করতে অনাবাসীদের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে উড়ানে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেখানে এই পরিযায়ী শ্রমিকরা এখনও রাস্তাতেই দিন-রাত কাটাতে বাধ্য় হচ্ছে।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Westbengal news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Odisha workers builders 12 days walk murshidabad