Jamalpur News: সালিশি সভায় হাজির না হওয়ার 'খেসারত' গোনার দিন অবশেষে শেষ হল। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার পর ঘরবাড়ি ছাড়া দশা থেকে অবশেষে মুক্তি। পুলিশের সহযোগিতায় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কুবাজপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরতে পারলেন বৃদ্ধা সাহানারা বিবি। পুলিশের উপস্থিতিতেই বৃদ্ধা তাঁদের বাড়ির দরজার তালা খুলে ঘরে ঢোকেন। ৩৪ দিন বাদে ঘরে ফিরতে পেরে বৃদ্ধা সাহানারা বিবি পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
সপরিবারে বৃদ্ধার বাড়ি ছাড়া হওয়ার ঘটনা সম্প্রতি তোলপাড় ফেলে দেয়। পাশাপাশি বিষয়টি জামালপুরের চকদিঘি পঞ্চায়েতের কুবাজপুর গ্রামেও উদ্বেগ বাড়ায়। নিজেদের ঘড়বাড়ি ছাড়া হয়ে থাকতে হওয়ার কারণ উল্লেখ করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য পুলিশের DG এবং জেলার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানান বৃদ্ধা সাহানারা বিবি।
বাড়ি ছাড়া হতে হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে সাহানারা বিবি মুখ্যমন্ত্রী-সহ প্রশাসনের কর্তাদের কাছে ভয়ঙ্কর অভিযোগ করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর পুত্রবধূর করা খোরপোষের মামলা এখন বর্ধমান আদালতে বিচারাধীন। বৃদ্ধা তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন, আদালতে বিচারাধীন থাকা পুত্রবধূর করা সেই মামলার বিচার এলাকার তৃণমূলের নেতা আজাদ রহমান করতে চান। সেইমতো গত ১৩ জুন তাঁদের বাড়িতে আসে চকদিঘি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আজাদ রহমানের সাগরেদরা।
আরও পড়ুন- Suvendu Adhikari: গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ, উঠল ‘চোর’ স্লোগান, রেগে লাল শুভেন্দু তেড়ে যেতেই…
তাঁরা জানিয়ে যায়, খোরপোষের মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আজাদ রহমান চকদিঘি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস
অফিসে বিচারসভা ডেকেছেন। বৃদ্ধা বলেন, "গত ১৪ জুন সেই বিচার সভায় আমাদের পরিবারের সবাইকে হাজির থাকতে হবে বলে জানায় ওরা। আজাদ রহমানের বিচার সভায় হাজির না হলে বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এমনকী আমাদের প্রাণে মেরে দেওয়ারও শাসানি দিয়ে যায়।"
এমন হুমকী পেয়েই ওই দিন সন্ধ্যায় বৃদ্ধা সাহানারা বিবির ছেলে শেখ বসির আলি জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সাহানারা বিবির অভিযোগ তাঁর ছেলে বসির আলিকে ব্যাপক মারধর করেছে আজাদের সাগরেদরা। তিনি ও তাঁর স্বামী তাঁদের ছেলে বসিরকে বাঁচাতে গেলে তাঁদের উপরেও হামলা হয় বলে অভিযোগ তাঁদের। আজাদ রহমানের সাগরেদরা তাঁর শ্লীলতাহানি করেছে বলে অভিযোগ বৃদ্ধার।
আরও পড়ুন- ভিডিওকলে সাবধান এখনই! কলকাতার নাগের ডগায় বসে যা ঘটাচ্ছিল এরা, জানলে আঁতকে উঠবেন!
সাহানারা বিবির দাবি, তাঁদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় কোনও সহৃদয় ব্যক্তি জামালপুর থানায় ফোন করে দেন। সেই ফোন পেয়ে পুলিশ তাঁদের বাড়িতে পৌঁছায়। পুলিশ তাঁদেরকে উদ্ধার করে জামালপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করে চিকিৎসকরা তাঁর ছেলে বসিরকে বর্ধমান হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
যদিও বৃদ্ধা সাহানারা বিবির আনা সমস্ত অভিযোগ চকদিঘি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শেখ আজাদ রহমান অস্বীকার করেন। তিনি জানান, বসির আলির পরিবারকে তিনি চেনেন। তবে আদালতে বিচারাধীন থাকা বসির আলির পুত্রবধূর করা মামলার বিচারের জন্য তিনি কোনও বিচারসভা বা সালিশি সভা ডাকেননি। মিথ্যা করে ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁর নাম জড়ানো হয়েছে বলে আজাদ রহমান দাবি করেছেন। তবে পুলিশ তদন্তে নেমে আজাদ রহমান সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। সেই মামলায় অবশ্য সকলেই জামিন পেয়েছেন।
আরও পড়ুন- Jamal Uddin Sardar: তৃণমূলের শহিদ দিবসের আগে ‘নাটকীয়’ গ্রেফতার, পুলিশের জালে সোনারপুরের সর্দার
এর পরেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধা সাহানারা বিবি। তার পরেই পরিস্থিতি বদল হতে শুরু করে। অবশেষে পুলিশের সহযোগিতায় শুক্রবার বাড়ি ফিরে আপাত স্বস্তিতে সাহানারা বিবি ও তাঁর ছেলে। গতকাল সাহানারা বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ। স্বামীর চিকিৎসা চলছে। কয়েকদিন পর স্বামীকে বাড়িতে নিয়ে চলে আসব।"