সতীর ৫১ পীঠস্থানের একটি হলো পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের মা বর্গভীমা। জেলার সদর ঐতিহাসিক তাম্রলিপ্ত বা তমলুকের আজও মধ্যমণি মা বর্গভীমা। এখানে নাকি কয়েকশো বছর ধরে শক্তিরূপিণী আদ্যাশক্তি মহামায়া রূপে দেবী বর্গভীমার আরাধনা চলে আসছে। মতান্তরে তিনি ভীমরূপা বা ভৈরব কপালী নামেও পরিচিত। অতীতের প্রায় সব কিছুই ধ্বংসের মুখে চলে গেলেও স্বমহিমায় আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে এই সুবিশাল মন্দির। ওড়িশি স্থাপত্যের আদলে এই দেউলের উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট। মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার অজস্র কাজ। তার মধ্যেই মন্দিরের গর্ভগৃহে কালো পাথরে তৈরি মায়ের মূর্তি বিরাজ করছে দেবী উগ্রতারা রূপে।
বর্গভীমা দেবীর মন্দিরে শুধু তমলুকে নয় পার্শ্ববর্তী বহুদূর বিস্তৃত অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত জাগ্রত দেবী হিসাবে স্বীকৃত ও পূজিত। আমাদের দেশের বহু প্রাচীন দেব-দেবীর মন্দির সম্বন্ধেই নানা জনশ্রুতি ও লোককথা প্রচলিত রয়েছে। বর্গভীমার মন্দিরের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। মন্দির তৈরির সময় ও প্রতিষ্ঠাতা নিয়েও একাধিক মত ও কাহিনী এখানে রয়েছে।
এলাকায় জনশ্রুতি, প্রাচীন ময়ূর বংশের রাজা গরুড়ধ্বজের সময়ে একজন জেলেকে শোলমাছ ধরতে পাঠানো হয়। একদিন মাছ ধরতে না পারায় রেগে গিয়ে রাজা জেলেকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। গরিব জেলে কোনওরকমে জঙ্গলে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি নাকি ভীমাদেবীর সাক্ষাৎ লাভ করেন। দেবী তাঁকে শোলমাছ ধরে শুষ্ক করে রাখতে বলেন এবং একটি বিশেষ কূপের জল ছিটিয়ে প্রয়োজন মত মাছগুলি বাঁচিয়ে তুলবেন বলে আশ্বাসও দেন।
আরও পড়ুন- বাঁশির সুরে মোহিত হন মা! ভোগে থাকে ইলিশ, সবুজকালীর মাহাত্ম্য সত্যিই চমকপ্রদ!
রাজা সারা বছর মাছ পাচ্ছেন দেখে কৌতূহলী হয়ে জেলেকে এর রহস্য জিজ্ঞাসা করেন। জেলে সব কিছু খুলে বলায় কূপের সেই অমৃতবারির কথা প্রকাশ পায়। এতে দেবী কুপিত হয়ে পাথরের মূর্তির রূপ ধরেন এবং কূপের মুখে উপবিষ্ট হয়ে মুখটি রুদ্ধ করে দেন যাতে কেউ সেই জল ব্যবহার করতে না পারে। রাজা তাম্রধ্বজ কূপের খোঁজ না পেয়ে পাথরের মূর্তির উপরেই মন্দির তৈরি করে দেন।
আরও পড়ুন- ‘হাত-পা প্যারালাইসিসের জায়গায় যাচ্ছে’, ইডির জিম্মায় আর কী কী হচ্ছে বালুর?
নিত্যপুজোর পাশাপাশি এখানে কালীপুজোর দিন বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। নিয়ম-নীতি মেনে পুজোপাঠের পাশাপাশি মাকে রাজবেশে সাজানো হয়। বিভিন্ন পদের ভোগও দেওয়া হয়। তমলুকে দেবী বর্গভীমা জাগ্রত হওয়ায় তমলুক শহরের অলিতে-গলিতে হয়ে থাকে মায়ের পুজো। তবে মা বর্গভীমার কাছে আগে পুজো দিয়ে তারপর শুরু হয় প্রতিমা পুজো। কালীপুজোর দিন উদ্যোক্তারা শোভাযাত্রা সহকারে মন্দিরে আসেন মায়ের কাছে পুজো দেন তারপর প্রতিমা পুজো হয়। পুজোর দিন জেলা, রাজ্য এমনকী ভিন রাজ্যের বহু মানুষ এখানে ভিড় জমান।