চাকরি চুরি গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিও সাড়। প্রতিবাদে মুখর এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরা। রোদ, বৃষ্টি হোক বা কনকনে শীত, যেকোনও উৎসব- হকের চাকরির দাবিতে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে লাগাতার ধর্না আন্দোলনে বসেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। আজ সেই আন্দোলনের হাজারতম দিন। আর কতদিন এবাবে চলবে? প্রতিবাদে শনিবার অভিনব প্রতিবাদ করলেন এসএলএসটির চাকরিপ্রার্থীরা। নিজেদের চাকরির দাবিতে মস্তক মুণ্ডন করলেন আন্দোলনকারীরা। শুধু পুরুষরাই নয়, মহিলা চাকরিপ্রার্থীরাও মাথার চুল কামিয়ে ন্যাড়া হলেন।
মস্তক মুণ্ডন করে রাসমণি পাত্র নামে মহিলা এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থী প্রতিবাদ করলেন। তাঁর কথায়, 'সরকার উদাসহীন আমাদের নিয়োগের ব্যাপারে। এর প্রতিবাদ জানাই। আমাদের যন্ত্রণার আজ হাজার তম দিন। এ রাজ্যের বিরোধী দল, শিক্ষাবীদ, বুদ্ধিজীবী, সাধারণ মানুষ সকলের কাছে আমাদের আবেদন সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে প্রশ্ন করুন আমাদের নিয়োগ কবে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নিয়োগ হবে। কবে হবে? আমারা ওনার কাছে পৌঁছতে পারিনি। অনেকবার চেষ্টা করেছি। মুখ্যমন্ত্রী যদি দেখে থাকেন একবার গান্ধীমূর্তির নিচে এসে দেখুন। এই যন্ত্রণা আর নিতে পারছি না। আপনি একজন মহিলা। আমাদের যন্ত্রণা বুঝুন।'
ওই প্রতিবাদকারী যখন এসব বলছেন তখন হাই হাই করে কাঁদছেন অন্য চাকরিপ্রার্থীরা। এঁদেরই একজন বলেছেন, 'মাননীয় আপানার রাজ্যে এটা কাম্য নয়। আমাদের চুল এভাবে বিসর্জন করতে হবে? আর কী করতে হবে আমাদের?' অন্য একজন বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী আপনি উত্তরবঙ্গে রয়েছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। আমাদের এই আন্দোলন যদি দেখে থাকেন তাহলে আগামিকালই আমাদের ধরনা মঞ্চে আসুন। আপনাকে এসে আমাদের নিয়োগ দিতেই হবে।'
আরও পড়ুন- SLST আন্দোলনকারীদের কাছে কুণাল পৌঁছতেই উত্তেজনা, উঠল ‘চোর চোর’ ধ্বনি
২০১৬ সালের নবম-দশমের শিক্ষকপদে মেধা তালিকায় এইসব আন্দোলনকারীদের নাম রয়েছে বলে দাবি প্রতিবাদীদের। ২০০০ সালের মার্চ থেকে পথে প্রতিবাদে তাঁরা। কিন্তু চাকরি মেলেনি।
কান্নায় ভেঙে পড়ে হকের চাকরির দাবিতে যখন মহিলা আন্দোলনকারীরা ন্যাড়া হচ্ছেন তখন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, 'এগুলো দৃষ্টি আকর্ষণের নাটক। বিষয়টি 'সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি। কিন্তু, ব্যাপারটা ভাল করে জানি না বলে বিশেষ কিছু বলব না।' সিপিআইএমের আইনজীবী নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের কথায়, 'আপাতত এঁদের চাকরি পাওয়ার কোনও আশা নেই। রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। ফলে এত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীকে রাস্তায় বসে থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন।'
নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সব মামলা কলকাতা হাইকোর্টে ফেরৎ পাঠিয়ে নতুন ডিভিশন বেঞ্চ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। গত ৯ নভেম্বর আগামী ২ মাসের মধ্যে সিবিআই, ইডিকে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। সেই নির্দেশ মেনে বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বার রশিদিকে নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে গঠিত হয়েছে বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ।