আলো বলতে মাটির বাড়িতে হাল আমলের তিনটি এলইডি লাইট ও পাখা। লোকদীপ প্রকল্পের সাহায্য বছর দশেক আগে ঘরের অন্ধকার কাটিয়ে আলো এসেছিল আদিবাসী নিম্মবিত্ত পরিবারটিতে। তবে সেই আলোর 'দাপটে'ই এবার অন্ধকারে পোলবা থানার দোনারপাড়ার সুরাই মুর্মুর পরিবার। অদ্ভুতুড়ে মিটার না কি ইলেকট্রিক অফিস এর ভুল? তিন মাসে এক লক্ষ টাকার উপর বিদ্যুৎ বিল দেখে হতবাক পরিবার।
ঠিক কী ঘটেছে?
পরিবার বলতে গত বছর থেকে স্ত্রী সুনিয়াকে নিয়ে একাই থাকেন সুরাই মুর্মু। তিন মেয়ের বিয়ের পর একমাত্র ছেলে সোমাই মুর্মুও জটিল অসুখে মারা যান। সেই সময় বিল বাকি থাকার কারণে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দেয় ইলেকট্রিক অফিসের লোকেরা। পরবর্তীতে ধার দেনা করে বকেয়া ১৩ হাজার টাকা মিটিয়ে সে লাইন চালুও করা হয়েছিল। কিন্তু গত বছর থেকেই ফের 'বিদ্যুৎ বিভ্রাট'-এ মুর্মু পরিবার। চলতি বছরে তিন মাসের যে বিল আসে তা দেখেই মাথায় হাত পড়ে গেছে মুর্মু দম্পতির।
আরও পড়ুন: টিকটকে মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র! গ্রেফতার পরীক্ষার্থী
তবে কী সমস্যা মিটারেই? দেখা গিয়েছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি মিটার পর্যবেক্ষণ করে যে ইউনিট দেখানো হয়েছে, বুধবার গিয়ে দেখা গেলো তার সঙ্গে আরও তিন হাজার ইউনিট যোগ হয়েছে। অর্থাৎ ১৩ দিনে বিদ্যুৎ পুড়েছে ৩ হাজার ইউনিট। তিন মাসে বিল এসেছে প্রায় ১ লক্ষ টাকারও বেশি। একই ঘটনা ঘটেছে সুরাই মুর্মুর প্রতিবেশী লক্ষণ হেমব্রমের বাড়িতে। ৪২ হাজার টাকা বিল আসায় বিদ্যুৎ কেটে দেওয়া হয়েছে তাঁর বাড়ি থেকেও। আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই গ্রামে আলোই যেখানে বিলাসিতাসম, সেখানে এক লক্ষ টাকার বিল প্রায় বজ্রাঘাতের ন্যায়।
স্থানীয় ইলেকট্রিক অফিসে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সেখানকার স্টেশন ম্যানেজার সুবীর রায় বলেন, "সুরাই মুর্মুর বিষয়টি আমি জানি। ওই বিলটি আউটস্ট্যান্ডিং বিল। দীর্ঘদিন ধরে ওনাদের বিল বাকি আছে। সব মিলিয়ে ওই বকেয়া টাকা এসেছে। ওনাদের লাইন কেটে দেওয়া হলেও ওনারা আবার নিজেরা জুড়িয়ে নিয়েছেন সে লাইন"। যদিও এই ঘটনাকে মিথ্যে বলে উল্লেখ করেছেন সুরাই মুর্মু। স্টেশন ম্যানেজার জানান সুরাই মুর্মুদের একটি লিখিত আবেদন দিয়ে জানাতে হবে সমস্যাগুলির ব্যাপারে। এরপর বিষয়টি তাঁরা উপরমহল পাঠাবেন। এমনকি দেখা হবে মিটারও।
তবে কীভাবে আদিবাসী সংসারে এত বিপুল অঙ্কের বিল আসছে, সেখানেই উঠছে প্রশ্ন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন