Advertisment

পেটে টান, তাও তিনপুরুষের ব্যবসা আঁকড়ে শহরের একমাত্র ঘোড়ার গাড়ির চাকার মিস্ত্রি

পারিবারিক ব্যবসা আঁকড়ে রয়েছেন মৌলালির বাসিন্দা নন্দকুমার শর্মা। কলকাতার একমাত্র ঘোড়ার গাড়ির চাকা সারানোর মিস্ত্রি। এই মূহুর্তে শহরে আর কারও এই সংক্রান্ত ট্রেড লাইসেন্স নেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NANDAKUMAR SHARMA

নন্দকুমার শর্মা। (এক্সপ্রেস ফোটো)

তিন পুরুষের ব্যবসা এখন কার্যত মরতে বসেছে। অধিকাংশ সময় কাজই জোটে না। জুটলেও যে ক'টা টাকা উপার্জন হয়, তাতে সংসার চালানো কঠিন। তা সত্ত্বেও পারিবারিক ব্যবসা আঁকড়ে রয়েছেন মৌলালির বাসিন্দা নন্দকুমার শর্মা। কলকাতার একমাত্র ঘোড়ার গাড়ির চাকা সারানোর মিস্ত্রি তিনি। এই মূহুর্তে এ শহরে আর কারও এই সংক্রান্ত ট্রেড লাইসেন্স নেই।

Advertisment

মৌলালির রামলীলা পার্কের ঠিক উল্টোদিকের অপরিসর গলিতে নন্দকুমারের বাড়ি। যদিও বাড়ি না বলে আস্তানা বলাই ভাল। ছোট ছোট কয়েকটা ঘর, জরাজীর্ণ দেওয়াল, ছাদের একাংশ ভেদ করে জল পড়ে। বাড়ির সামনে সার দিয়ে রাখা একের পর এক হাতে টানা রিকশ এবং ঘোড়ার গাড়ি। নন্দকুমার জানান, তাঁদের আদি বাড়ি বৈশালীতে। গত শতকের তিনের দশকে তাঁর ঠাকুরদা কলকাতায় আসেন। কিছুদিন অন্য পেশায় থাকার পর শুরু করেন চাকা মেরামতির কাজ। নন্দের কথায়, “সে সময় শহরে প্রায় আড়াই হাজার ঘোড়ার গাড়ি আর অসংখ্য হাতে টানা রিকশ চলত। ফলে রমরম করে বেড়ে উঠেছিল ব্যবসা। এর কিছুদিনের মধ্যেই ঠাকুরদা এখানে জমি কিনে বাড়ি বানালেন। বাবার মুখে শুনেছি, দমদম, বিরাটি, বরানগর থেকেও লোক আসত ঘোড়ার গাড়ি সারাতে। এছাড়া দক্ষিণের পার্ক সার্কাস, মেটিয়াবুরুজ, খিদিরপুর, উত্তরের বাগবাজার, মানিকতলা, আমাদের আশপাশের মধ্য কলকাতার বিভিন্ন এলাকা থেকে তো বাঁধা খদ্দের ছিলই। তখন শহরে কয়েকশো কারিগর ছিলেন, যাঁরা ঘোড়ার গাড়ি আর টানা রিকশর চাকা সারাতেন। তাই আমার বাবাও চোখ বন্ধ করে পারিবারিক ব্যবসাতেই নেমে পড়লেন।”

আরও পড়ুন- ‘আর্মানি গির্জে’: কলকাতার প্রাচীনতম চার্চ

সময়টা বদলাতে শুরু করল গত শতাব্দীর আটের দশক থেকে। ক্রমশ শহরে ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা কমতে লাগল। তারও দু'দশক পরে হাতে টানা রিকশও কার্যত বিলুপ্ত প্রজাতিতে পরিণত হতে শুরু করল। নন্দ বলেন, “ছোটবেলাতে মোটামুটি স্বচ্ছল অবস্থা ছিল আমাদের। তাই আমিও বাবার পেশাতেই যোগ দিলাম৷ কিন্তু, ধীরে ধীরে ব্যবসা কমতে লাগল। গত বছর দশেক তো সংসার চালানোই দায়। আমি ছাড়া এখন এই পেশায় আর কেউ নেই।” পুরসভা সূত্রের খবর, এখন শহরে ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা মাত্র ২৯টি। হাতে টানা রিকশর সংখ্যাও একশোর কম।

চাকা সারিয়ে রোজগার কেমন হয়? নন্দ বলেন, “খুবই কম। ঘোড়ার গাড়ির চাকা সারালে পাই ৮০০০ টাকা। আর টানা রিকশর চাকা সারালে মেলে ৪০০০ টাকা। ক'টাই বা কাজ আসে! শহরে তো ঘোড়ার গাড়ি, টানা রিকশর পাট চুকতে বসেছে। মাসে হাজার আটেক রোজগার করতে পারলেই মনে হয় অনেক।” তাঁর কথায়, “মাঝেমাঝে মনে হয়, অন্য কাজে ভিড়ে যাই। কিন্তু, পেট তো কথা শোনে না। তারপরই ভাবি, আমিও তো শহরের ঐতিহ্যের অংশ, সেটাই বা কম কী!”

kolkata heritage
Advertisment