রাত পোহালেই ভোট। ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের সর্বত্র দেওয়ালের দখল নিয়েছে ভোটের প্রচার। জোড়া ফুল, পদ্ম, কাস্তে-হাতুড়ি অথবা হাত প্রতীকের রমরমার মাঝে ব্যতিক্রম একটি ছোট্ট গ্রাম। সেখানেও প্রতিটি বাড়ির দেওয়াল রঙিন। দেওয়াল জুড়ে কিসিমের ছবির সমাহার। কিন্তু কোথাও এক ছটাক ভোটের রং নেই।
ঝাড়গ্রাম রেলস্টেশন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের একটি গ্রাম। নাম, লালবাজার। খান কুড়ি ঘর মানুষের বসবাস। জনসংখ্যা বড়জোর ৬০-৭০। তাঁদের অধিকাংশই লোধা সম্প্রদায়ের মানুষ। ছোট্ট এই গ্রামেই শুরু হয়েছে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের এক কর্মকাণ্ড। একদল শিল্পী স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য নিয়ে গ্রামের প্রতিটি দেওয়াল রঙে-রেখায় রাঙিয়ে তুলছেন। ছবিতে ফুটে উঠছে লোধাদের বিবাহরীতি, স্থানীয় ইতিহাস, পরম্পরা, বিভিন্ন মিথ। গত ডিসেম্বরে চালচিত্র অ্যাকাডেমি নামে একটি সংস্থার উদ্যোগে শুরু হওয়া এই কর্মযজ্ঞ ভোল বদলে দিয়েছে লালবাজারের। ছোট্ট গ্রামটি এখন মুখে মুখে খোয়াবগাঁ নামে পরিচিত। এই নতুন নাম দিয়েছেন বিশিষ্ট অধ্যাপক শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ১৯৫২ সালে পোলিং অফিসার, ২০১৯ সালেও ভোটার!
চলতি নির্বাচনে ভোটপ্রচারের শুরুর দিকে গ্রামে দেওয়াল লিখতে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। তাঁদের বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। ৭১ বছরের কালীপদ আহিরি জানান, গ্রাম জুড়ে ছেলেমেয়েরা যে ছবি এঁকেছে, তা মুছে নির্বাচনী দেওয়াল লিখন করা যাবে না। গ্রাম ঘুরে দেখে মুগ্ধ হন রাজনৈতিক কর্মীরাও। তাঁরা দেওয়াল না লিখেই ফিরে যান। ফলে খোয়াবগাঁ-র শরীরে এবার ভোটের রং-তুলির আঁচড় পড়ে নি।
চালচিত্র অ্যাকাডেমির কর্তা মৃণাল মণ্ডল বলেন, "শুরুটা হয়েছিল খুব ছোট করেই। আমরা এই গ্রামে বেড়াতে এসে জায়গাটিকে ভালবেসে ফেলি। ঠিক করি, এখানে কিছু একটা করতে হবে। প্রতি শনিবার গ্রামের ছোটদের নিয়ে আঁকার ক্লাস শুরু হয়। রামেশ্বর সোরেন, যজ্ঞেশ্বর হাঁসদা নামে দুই স্থানীয় শিল্পী ক্লাস নিতেন। তারপর ধীরে ধীরে কলকাতার শিল্পীরা আসতে থাকেন। আমরা ঠিক করি, গোটা গ্রামকেই সাজিয়ে তুলব।"
মৃণাল জানান, আঁকা ছাড়াও মহিলাদের কাঁথা সেলাই-এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ভেষজ গাছের নার্সারি তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে খোয়াবগাঁ। তাই সেখানে প্রবেশ নিষেধ নির্বাচনের রং-এর।