স্কুলশিক্ষার পিছনে আর সরকারি অর্থ ঢালতে নারাজ নবান্ন। এমনটাই অভিযোগ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। এনিয়ে তিনি টুইট করেছেন। শুভেন্দু বলেছেন, রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ইতিমধ্যেই চার লক্ষ কমেছে। রাজ্যের ৮,২০৭টি সরকার পরিচালিত স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০-এর কম। প্রাথমিকস্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিপূরক ক্লাস করানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। যার অর্থ, রাজ্য সরকার সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা একেবারে বন্ধ করার পরিকল্পনা করে ফেলেছে।
নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে একটি সরকারি চিঠিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন শুভেন্দু। এই সরকারি চিঠিটি বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার জেলাশাসককে লিখেছেন। যাতে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিভিক পুলিশরা 'অঙ্কুর' নামে এক প্রকল্পের আওতায় বাঁকুড়ার ৪৬টি স্কুল বা কমিউনিটি সেন্টারে শিশু পড়ুয়াদের পরিপূরক ক্লাস করাবে। জেলাশাসককে এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে অনুরোধ করেছেন পুলিশ সুপার। ওই সরকারি চিঠিকে সামনে রেখে পালটা টুইট করেছেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। তিনি লিখেছেন, 'ক্লাস নেবে সিভিক ভলেন্টিয়ার, মন্টেশ্বরী ট্রেনিং, বিএড- সব এখন ইতিহাস। জয় বাংলা।'
এর আগেই জানা গিয়েছিল, রাজ্য সরকার পোষিত ৬,৮৪৫টি প্রাথমিক স্কুল ও ১,৩৬২টি উচ্চপ্রাথমিক বন্ধ হতে চলেছে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৮,২০৭। যার মধ্যে আবার ৫৩১টি স্কুল রয়েছে কলকাতায়। সম্প্রতি রাজ্যের যে সব স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০ জনের কম, তার তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা দফতর।
সেই তালিকায় দেখা গিয়েছে, কোথাও পড়ুয়ার সংখ্যা ১৫, কোথাও সেটা ১৮। আবার, মাত্র ২ জন শিক্ষার্থী, এমন স্কুলও রয়েছে। অথচ, এই সব স্কুলের প্রতিটিতে অন্ততপক্ষে ৩০০ জন পড়ুয়া থাকার কথা। সেই হিসেবে প্রায় পড়ুয়াহীন ৮,২০৭ স্কুলে শিক্ষার্থী প্রায় না-থাকলেও স্থায়ী শিক্ষকের সংখ্যা ১৯,০৮৩ জন। পাশাপাশি, রয়েছে পার্শ্বশিক্ষকও। যার সংখ্যা ১,১৮১।
আরও পড়ুন- চাকা গড়ানোর প্রায় চার দশক, এতদিনে মেট্রো স্টেশন পাচ্ছে কলকাতা বিমানবন্দর
এর ফলে ওই সব শিক্ষকদের কার্যত বসিয়ে মাইনে দিতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। যাতে সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। তাই যেসব স্কুলে ৩০ জনের কম পড়ুয়া রয়েছে, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই সিদ্ধান্তের পর মাস তিনেক আগে ডিআইদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেছেন শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন।
এই সব স্কুলের পড়ুয়া, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের আশপাশের স্কুলে বদলি করে দেওয়া হবে। বন্ধ হতে চলা এই সব স্কুলের মধ্যে রয়েছে নদিয়ার ১,১০০, বাঁকু়ড়ার ৮৮৬, উত্তর ২৪ পরগনার ৫৩৮, কলকাতার ৫৩১, ঝাড়গ্রামের ৪৭৮, দার্জিলিঙের ৪১৮, মুর্শিদাবাদের ৩২৬, বীরভূমের ৩২০, কালিম্পঙের ৩১২, হুগলির ৩০৩, হাওড়ার ২৭৩, জলপাইগুড়ির ২১৬, মালদার ১৪৬টি স্কুল।