রাজ্যে বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। হু হু করে আক্রান্ত হচ্ছেন রাজ্যের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। পাহাড় থেকে সমতল, সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যেই দুই চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। করোনা আক্রান্ত হয়েছে মৃত্যু হয়েছে, পুরুলিয়ার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (১) সত্যনারায়ণ চৌধুরী। বয়স হয়েছিল ৬০। অপর দিকে এদিনই করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে, বারাসাতের জেনারেল ফিজিশিয়ান পারিজাত বিকাশ রায়ের। বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। দুজনেই কোভিডের দুটি ডোজই নিয়েছিলেন। তবে দুজনের কোর্মিবিডিটি ছিল বলেই জানা গিয়েছে। দুই চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসতেই চিকিৎসক মহলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
সূত্র মারফত খবর একের পর এক হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন শতাধিক চিকিৎসক স্বাস্থ্য কর্মী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের ৭০ জন চিকিৎসক। এছাড়াও আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের ৩০ জন দন্ত চিকিৎসক, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল-সহ ৩৬ জন, বেলেঘাটা আইডির দুই ডাক্তার, রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজির অন্তত ১০ জন চিকিৎসক করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। পাশাপাশি বেলেঘাটা আইডি, এম আর বাঙ্গুরের বেশ কয়েকজন নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকরা করোনা পজিটিভ হয়েছেন।
তাতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার মতে, “এত সংখ্যক ডাক্তার স্বাস্থ্য কর্মী করোনায় আক্রান্ত হলে পরিষেবা চালু রাখাই সমস্যা হয়ে যাবে”। ইতিমধ্যেই রাজ্যের তরফে ছুটি বাতিল করা হয়েছে ডাক্তার স্বাস্থ্য কর্মীদের। এখন প্রশ্ন, যে সকল ডাক্তার স্বাস্থ্য কর্মী হাসপাতালে পরিষেবা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে যদি করোনা হানা দেয় তাহলে পরিষেবা মিলবে কী করে? এই প্রশ্ন নিয়ে রীতিমত উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য ভবনও।
পূর্ব রেলের একাধিক হাসপাতালের অন্তত ২১ জন চিকিৎসক, প্যারা মেডিক্যাল কর্মীও সংক্রমিত হয়েছেন। সংক্রমিত চিকিৎসকেরা আইসোলেশনে। রয়েছেন বাড়িতে। ফলে কাজ করতে পারছেন না তাঁরা। ফলত হাসপাতালের আউটডোর হোক বা ইনডোরে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখভাল করবেন কে? চিকিৎসক মহল মনে করছেন, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে। এপ্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’র সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা জানিয়েছেন, “পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইতিমধ্যেই রাজ্যসরকারের কাছে সংগঠনের তরফ থেকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে”। তিনি বলেন, “করোনা শুরুর সময় থেকে আজ পর্যন্ত আমরা বঙ্গে
শতাধিক ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মীকে করোনায় হারালাম। এদের মধ্যে সকলেই পরিষেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রাণ হারিয়েছেন। অথচ রাজ্যসরকারের তরফ থেকে অনেক সহকর্মীর পরিবার পরিজন ঘোষণা অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না। সেই সঙ্গে করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসক নিজের টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন, সেই বিষয়ে রাজ্য সরকারের উদাসীন মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে সংগঠনের তরফে”।
তাঁর কথায়, “রাজ্যসরকার যদি এই বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা না করেন তাহলে আন্দোলনের পথে নামতে হবে আমাদের”। এদিকে প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইন্দ্রনীল চৌধুরী জানান, “একের পর এক চিকিৎসক এভাবে টিকা নেওয়ার পরেও সংক্রমিত হলে আগামী দিনে স্বাস্থ্য পরিষেবা সচল রাখাই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে”। কোভিড তৃতীয় ঢেউ নিয়ে তিনি বলেন, “ইতিমধ্যেই ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের টিকাদান শুরু হয়েছে, তাঁদের উদ্দেশ্যে তিনি সকলকে টিকা নেওয়ার এবং যথাযথ কোভিড বিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন”।