Advertisment

দাপুটে সিপিএম নেতা এখন তৃণমূলের 'ছাপ্পাদার'! বুথে ঢুকে দেদার ছাপ্পা, প্রিসাইডিং অফিসারের যুক্তি, 'মরব নাকি?'

নিজের ভোট নিজে দিতে না পারার ক্ষোভে কানঘোসা গ্রামের তিনশোর বেশি ভোটার এলাকায় ফিরেই তৃণমূল-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের পতাকা-ফ্ল্যাগ ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

IE Bangla Web Desk এবং Subhamay Mandal
New Update
Panchayat Election 2023: Burdwan's Jamalpur gram panchayat vote rigging TMC

বাচ্চু মাঝির ইশারায় তাঁর দলবল বুথে ঢুকে দেদার ছাপ্পা ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্সে ভরা চালিয়ে যেতে থাকে। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

'পুলিশের নিরাপত্তা পাচ্ছি না। আমি কি মারা যাব! তাই চুপ চাপ বসে থেকেই দেখে যেতে হচ্ছে ছাপ্পা ভোট দেওয়া।' শনিবার ভরদুপুরে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ১৫২ নম্বর বুথের প্রিজাইডিং অফিসার যখন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে এমন অসহায়তার কথা শোনাচ্ছেন তখনও অব্যাহত থাকল ছাপ্পা ভোট দেওয়া। আর ভোট দিতে গিয়েও ভোট দিতে না পেরে গ্রামে ফিরেই চুরির ভোটের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলে তৃণমূল-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের পতাকা ছিঁড়ে পুড়িয়ে দিলেন তিনশোর বেশি ভোটার। এত কিছু সত্ত্বেও নীরবই থাকলেন ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কমিশনের কর্তা ব্যক্তিরা।

Advertisment

বাম আমলে জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কাড়ালা, ডাঙ্গা ও কানঘোসা গ্রামগুলি সিপিএমের দুর্গ হিসাবেই পরিচিত ছিল। সেই সময়ে এইসব গ্রামে সিপিএমের হয়ে দাপট দেখাতেন স্থানীয় বাচ্চু মাঝি নামে এক যুবক। মমতা বন্দোপাধ্যায় জিন্দাবাদ, তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ বলার অপরাধে বাচ্চু মাঝি ও তাঁর দলবলের হাতে মার খেয়ে জখম হননি এমন তৃণমূল কর্মীর সংখ্যাও এইসব গ্রামে খুব একটা কম নেই। শুধুমাত্র রাজনীতির দৌলতে করে খাওয়ার ব্যাপারে এই বাচ্চু মাঝি সিদ্ধহস্ত বলেই জানেন এলাকার মানুষজন।

publive-image
শুধুমাত্র রাজনীতির দৌলতে করে খাওয়ার ব্যাপারে এই বাচ্চু মাঝি সিদ্ধহস্ত বলেই জানেন এলাকার মানুষজন।

রাজ্য রাজনীতিতে পালা বদলের পর ধুরন্ধর বাচ্চু মাঝি লাল ঝাণ্ডা ও কমিউনিস্ট আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস দলে যোগদানের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আর ব্লক তৃণমূলের কিছু স্বার্থান্বেষী নেতা দলের কর্মীদের আপত্তি সত্ত্বেও বাচ্চু মাঝিকে দলে বরণ করে নেয়। বাচ্চু মাঝি এখন তৃণমূলের নেতাদের অতি প্রিয় পাত্র। তাঁর লক্ষ্মীর ভাণ্ডারও এখন উপচে পড়ছে। আর যাঁরা বাম আমলে বাচ্চু মাঝি ও তাঁর দলবলের অত্যাচার সহ্য করেও তৃণমূল পার্টিটা করেছিলেন তাঁরা এখন তৃণমূলে ব্রাত্য হয়ে গিয়েছেন। তবে দল

পালটালেও রাজনীতির ধরন ধারণ বদলাননি বাচ্চু মাঝি। শনিবার তাঁর নেতৃত্বেই ডাঙ্গা ফরিদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫২ নম্বর বুথে দেদার ছাপ্পা ভোট চলে বলে একযোগে অভিযোগ করেছে সিপিএম ও বিজেপি নেতৃত্ব।

ছাপ্পা ভোট চলার খবর পেয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধি ও তাঁর চিত্র সাংবাদিক ওই বুথে পৌছাতেই রণংদেহী হয়ে ওঠে তৃণমূল কর্মীরা। ওই সময়ে বুথের একমাত্র প্রহরী সশস্ত্র মহিলা কনস্টেবল নিরুপায় দর্শকের মত বসেছিলেন। তারই মধ্যে ওই তরুণ চিত্র সাংবাদিক বুথে ঢুকে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার ছবি মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দি করা শুরু করতেই তাঁর উপর চড়াও হয় বাচ্চু মাঝির দল বল। তাঁরা চিত্র সাংবাদিককে ধরে ব্যাপক মারধর করে, এমনকি তার মোবাইল ফোনটিও কেড়ে নেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা চরমে পৌছালে বিশাল পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী ওই বুথে পৌছায়। কিন্তু তখনও বাচ্চু মাঝির ইশারায় তাঁর দলবল বুথে ঢুকে দেদার ছাপ্পা ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্সে ভরা চালিয়ে যেতে থাকে। চোখের সামনে তা দেখেও শুধু দর্শক হয়ে বুথে বসে ছিলেন প্রিজাইডিং অফিসার সহ অন্য ভোট কর্মীরা। ওই সময়ে বুথে কোনও বিরোধী দলের এজেন্টেরও দেখা পাওয়া যায়নি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধি অন্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় সেই ছাপ্পা ভোট দেওয়ার ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করা শুরু করতেই বেকায়দায় পড়ে যায় বাচ্চু মাঝির বাহিনী। তাঁরা বুথ ছেড়ে পালানো শুরু করে।

এই ভাবে ছাপ্পা ভোট চলতে দেওয়ার কারণ প্রিজাইডিং অফিসার অরবিন্দ ধারার কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁর সাফ জবাব, “আমি কি করবো? আমি কি মারা যাবো?“ কখন থেকে ছাপ্পা ভোট দেওয়া চলছে। প্রিজাইডিং অফিসার তুরন্ত উত্তর দেন, বেলা ১২টার পর থেকে। পুলিশ কোথায়? উত্তরে প্রিজাইডিং অফিসার দূরের দিকে হাত দেখিয়ে বলেন, “ওই তো দেখুন না,দাঁড়িয়ে আছে।“ ছাপ্পা ভোট দেওয়া রোখার জন্য পুলিশের সাহায্য কি পাচ্ছেন না? এই প্রশ্নের উত্তরেও না ছাড়া হ্যাঁ বলেননি প্রিজাইডিং অফিসার। ওই সময়ের মধ্যেই পুলিশ চিত্র সাংবাদিকের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে তার হাতে তুলে দেয়।

আরও পড়ুন ভোট মিটলেও বিরাম নেই হিংসার, বোমা-গুলিতে তপ্ত এলাকা, জখম বহু

এত কিছুর পরেও ১৫২ নম্বর বুথে তৃণমূলের ছাপ্পা ভোট দেওয়া বন্ধ হয়নি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধি বুথ ছাড়তেই ফের শুরু হয়ে যায় ছাপ্পা ভোট দেওয়া। দুপুরে ওই বুথেরই কানঘোসা গ্রামের ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে ভোট দিতে পারেন না। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের হয়ে যাঁরা বুথে ছাপ্পা দিচ্ছিল তারাই তাঁদেরকে জানিয়ে দেয়, “ভোট হয়ে গেছে বাড়ি চলে যান“। এমনটা শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন কানঘোসা গ্রামের ভোটাররা। নিজের ভোট নিজে দিতে না পারার ক্ষোভে কানঘোসা গ্রামের তিনশোর বেশি ভোটার এলাকায় ফিরেই তৃণমূল-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের পতাকা-ফ্ল্যাগ ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাশাপাশি তারা শাসক দলের বিরুদ্ধেও বিষদোগার করেন।

নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্লকের আধিকারিকরা এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে কোন মন্তব্য করতে চাননি । তৃণমূল নেতা বাচ্চু মাঝিও পাশ কাটান। তবে জামালপুর নিবাসী জেলা সিপিআইএম নেতা সমর ঘোষ বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ছেলো খেলা হয়েছে। শুধু ডাঙ্গা গ্রামের বুথ নয়,জেলার আরও অনেক বুথেই ছাপ্পা ভোট পড়েছে।“ এর সবিস্তার নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে বলে সমর ঘোষ জানিয়েছেন। অন্যদিকে জামালপুরের বিজেপি যুব নেতা অজয় ডকাল বলেন, বাম আমলে বাচ্চু মাঝি যে কায়দায় সন্ত্রাস চালাত, ভোট রিগিং করত ,তেমনটাই এবারের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের হয়ে করেছে। ডাঙ্গা গ্রামের ১৫২ নম্বর বুথে পুনঃনির্বাচনের দাবি করেছেন অজয় ডকাল।

panchayat election 2023 West Bengal panchayat election bjp tmc East Burdwan
Advertisment