Advertisment

কমছে আক্রান্তের সংখ্যা, তবে কি শেষের দিকে অতিমারি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

সংক্রমণ কমার পরবর্তী ধাপ কি? প্যান্ডেমিক নাকি এনডেমিক হিসাবে থাকবে করোনা ভাইরাস? আদৌ কি করোনা মুক্ত হবে পৃথিবী? এমন অনেক প্রশ্নের ভিড়...

author-image
Sayan Sarkar
New Update
Maharashtra recorded over Covid-19 15,000 new cases, Mumbai’s cases slip below 1,000 mark

মোটের উপর সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মহারাষ্ট্রে।

বিশ্বজুড়ে ডেল্টা-ওমিক্রনের দাপটে নাজেহাল অবস্থা সকলের। ওমিক্রন যেন বিশ্ববাসীর পিছু ছাড়ছে না। কিছুটা কমলেও আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ এখনই শেষ হচ্ছে না। কবে এই মহামারি থেকে দেশবাসীর রেহাই কবে মিলবে! একটাই প্রশ্ন যেন সকলের মনের উঁকিঝুঁকি মারছে। এবিষয়ে কী জানালেন হার্ভার্ড ইমিউনোলজিস্ট। হার্ভার্ড ইমিউনোলজিস্ট ডঃ শিব পিল্লাই জানান,’করোনা কখনই বিশ্ব থেকে পুরোপুরি নির্মূল হবে না’। তবে তিনি আশা করছেন, কয়েক বছরের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা পদ্ধতির ফলে কিছুটা নির্মূল হতে পারে কোভিড”।

Advertisment

তবে, শিব পিল্লাই উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন,"করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন BA.2 এর রূপ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এটি সম্পর্কে এখনও খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। ওমিক্রন BA.1 থেকে আলাদা ওমিক্রন উপপ্রজাতি BA.2"।

হার্ভার্ড ইমিউনোলজিস্ট জানান, "BA.1 থেকে BA.2 বেশি সংক্রমিত। যদিও সব ডেটা আমাদের হাতে আসেনি। সমস্ত রিপোর্ট আমাদের হাতে এলে তবে প্রমাণিত হবে BA.2 মৃদু কিনা! ভারত জুড়ে BA.2 এর প্রভাব এখন বেশি চলছে। সেই সঙ্গে BA.2 বেশি প্রভাবিত করছে দক্ষিণ আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সেই সঙ্গে তালিকায় রয়েছে ব্রিটেন। তবে তিনি উদ্বেগও প্রকাশ করছেন। তিনি বলছেন। তাহলে কী করোনার আরেকটি তরঙ্গের তৈরি হবে"!

অনেক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেই এক মত ডঃ পিল্লাই। যেসব বিজ্ঞানীদের মতে, 'করোনা কখনই পুরোপুরি বিশ্ব থেকে বিদায় নেবে না। ভ্যাকসিন ও ওষুধ দেওয়ার ফলে এর প্রভাব কিছুটা কমতে পারে'। দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা গোষ্ঠী সংক্রমণের পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভারতের SARS-COV-2 জেনোমিক্স কনসোর্টিয়াম ভ্যারিয়েন্টের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করেছে। BA.2 এর প্রভাব বেশি পড়ছে ভারতে। যা নিয়ে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে দেশে। তবে কী আমাদের ছেড়ে কখনই বিদায় নেবে না করোনা ভাইরাস? আশার কথা, বিজ্ঞানীরা বলছেন, "এসব প্রশ্নের উত্তর হবে - "হয়তো খুব শিগগিরই।" তারা বলছেন ইতোমধ্যেই কোভিড মহামারি "শেষ হয়ে যেতে শুরু" করেছে। এটি যে এখন শেষ পর্যায়ে তার লক্ষণ স্পষ্ট।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মহামারির পরে কী? জীবন কি আগের অবস্থায় ফিরে যাবে, নাকি তৈরি হবে নতুন কোনও পরিস্থিতি? ভাইরাসটি কি এই পৃথিবী থেকে একেবারেই উধাও হয়ে যাবে?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো সন্দেহ নেই যে কোভিড থাকবে, কিন্তু সেটা 'প্যান্ডেমিক' হিসেবে নয়, থাকবে 'এন্ডেমিক' হিসেবে।

অর্থাৎ আমাদের সামনে কোভিড-পরবর্তী নতুন এক বিশ্ব আসন্ন যেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মহামারির মতো এতো মানুষের মৃত্যু না হলেও, এই অসুখটি আর দশটি সাধারণ রোগের মতোই থেকে যাবে। যুক্তরাজ্যে লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর জুলিয়ান হিসকক্স জানিয়েছেন "বলা যায় যে এরকম পরিস্থিতিতে আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি। বলতে পারেন মহামারি শেষ হতে শুরু করেছে। অন্ততপক্ষে যুক্তরাজ্যে। আমার মনে হয় ২০২২ সালে আমাদের জীবন প্যান্ডেমিকের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।"

ভারতেও কী তবে অতিমারি শেষের পথে? কী জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা, অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিসেস অফ ডক্টর্স’র সাধারণ সম্পাদক, মানস গুমটা জানিয়েছেন ‘গত একশ বছরে বিভিন্ন প্যানডেমিক পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সেসব মহামারি এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। সেই বিবেচনায় হয়তো বলা হচ্ছে যে এটাই হয়তো শেষ বছর। কিন্তু এখানে অন্য প্রশ্নও রয়েছে। দুটো সম্ভাবনা আছে। আমরা অমিক্রনের যত মিউটেশন দেখছি সেটি আবার ততোই সংক্রমিত হচ্ছে। যখনই ভাইরাস ব্যাপক ট্রান্সমিশনে থাকে তখন ভাইরাসের আরও বেশি মিউটেশনের সম্ভাবনা থাকে। তখন হয়তো ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আবার শক্তিশালীও হতে পারে। একারণে প্যান্ডেমিক শেষ হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটা বলার জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে, সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, বিপদ যে একেবারেই চলে গেছে এমনটা নয়। যেমন একবার ডেল্টায় আক্রান্ত হওয়ার পরও ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে সেরকমই ওমিক্রনে একবার আক্রান্ত হওয়ার পরও আবারও ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই আমাদের আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। মানুষ যদি সাবধান না হন তাহলে আরও অনেক ওয়েভ আমাদের সামনে আসতেই পারে”।

কিন্তু সারা বিশ্বেই কি প্রতিরোধের এই চিত্রটা একই রকমের?

পশ্চিমী দেশগুলোর তুলনায় দরিদ্র দেশগুলোতে খুব কম সংখ্যক মানুষই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এসব দেশে টিকাও দেওয়ার হারও অনেক কম। ফলে দরিদ্র দেশগুলোতেও মহামারি এখন শেষ পর্যায়ে- একথা কি বলা যাবে? মনে রাখতে হবে এসব দেশে মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও মানুষের দেহে ভাইরাসটি প্রতিরোধের ক্ষমতা কিন্তু এখনও সেভাবে তৈরি হয়নি। ফলে ধনী দেশগুলিকে দরিদ্রদেশগুলির পাশে থেকে টিকাদানের কাজে অগ্রগতির কথা বলেছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ভাইরোলজিস্ট ড. এলিজাবেটা গ্রোপেলি বলেছেন, "আমি খুব আশাবাদী যে আমরা খুব শীঘ্রই এমন এক পরিস্থিতিতে পৌঁছাবো যেখানে ভাইরাসটি ছড়ালেও টিকাদান এবং ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে রক্ষায় আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু সাধারণ লোকজনের খুব একটা অসুবিধা হবে না।"

মহামারী বিশেষজ্ঞরা একটি রোগকে তখনই 'এন্ডেমিক রোগ' হিসেবে বিবেচনা করেন যখন সেই রোগের মাত্রা স্থিতিশীল থাকে এবং বোঝা যায় এর পর কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কিন্তু যখন কোনো একটি রোগ হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে অতিদ্রুত বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে সেটিকে তারা বিবেচনা করেন 'প্যান্ডেমিক রোগ' হিসেবে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের মহামারি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আজরা গানি বলেন, "আমরা খুব দ্রুত এন্ডেমিক পর্যায়ে চলে যাব। মনে হচ্ছে অনেক সময় লাগছে কিন্তু মনে রাখতে হবে যে মাত্র এক বছর আগে লোকজনকে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এবং এই টিকার কারণে আমরা আগের তুলনায় অনেক বেশি স্বাধীন জীবন যাপন করতে পারছি।"

তবে এপ্রসঙ্গে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজন নতুন টিকার ব্যবহার। যেভাবে টিকা নেওয়ার পরেও তৃতীয় ঢেউকালীন ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্য কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাতে করে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট ভাইরোলজিষ্ট অমিতাভ নন্দী। তার কথায়, “ করোনা নিয়ে আরও অনেক বেশি গবেষণা প্রয়োজন। এখনই করোনা চলে যাবে এমন ভাবার মত সময় বোধহয় আসেনি”।

“বিশেষ করে ভ্যাকসিনের সময়কাল করোনার বিস্তার রোধে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। সেক্ষেত্রে কী একটার পর একটা বুস্টার ডোজই আমাদের ভরসা হয়ে দাঁড়াবে? এমনটা নয়, তার জন্য প্রয়োজন স্থায়ী সমাধান”, বলেছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক সৌম্যজিত গুহ।

experts opinion pandemic or endemic
Advertisment