Advertisment

চোখের সামনে তিলে তিলে মরছে ছেলে, স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন বাবা-মায়ের

তাঁর জন্মদিনের ঠিক আগেই শুভেন্দুর স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানালেন তাঁর বাবা-মা। তার কারণ, প্রতিদিন তিল তিল করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছেন শুভেন্দু।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অসহায় বাবা-মা

মঙ্গলবার জন্মদিন ছিল একমাত্র ছেলের। ৩৭ পেরিয়ে ৩৮ শে পা দিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় হলদিয়ার মহিষাদল ব্লকের জগন্নাথপুরের বাসিন্দা শুভেন্দু মাজি। কিন্তু তাঁর জন্মদিনের ঠিক আগেই শুভেন্দুর স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানালেন তাঁর বাবা-মা। তার কারণ, প্রতিদিন তিল তিল করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছেন শুভেন্দু। এক বছর আগে পর্যন্তও ছেলেকে সুস্থ করে তোলার লড়াই চালিয়ে গেলেও এখন কাঠের ব্যবসায়ী বাবা সুশান্ত মাজি এবং মা রীনা মাজি ছেলের জন্যে শুধুমাত্র শান্তির মৃত্যু কামনা করেন।

Advertisment

স্বপ্নের ডানায় উড়তে উড়তে কখন কেটে গেছিল ৩৩ টা বছর। শুভেন্দুকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের। ছেলে লেখাপড়া শিখবে, চাকরি করবে, বিয়ে করে সংসার পাতবে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরি পেয়েছিলেন শুভেন্দু। বিয়ে করে পুত্রসন্তানের বাবাও হয়েছিলেন। কিন্তু নিয়তি আর স্বপ্নের পথ যে আলাদা। হাসিখুশি শুভেন্দুর জীবনে নেমে এল দুঃসময়। ২০১৪ সালে মেচেদা-হলদিয়া রাজ্য সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন শুভেন্দু। সেই থেকে শরীরে-মন সবই অসাড়।

কলকাতা-বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন হাসপাতালে এ পর্যন্ত তাঁর চিকিৎসার জন্য খরচ হয়েছে কোটির অধিক টাকা। কিন্তু পাঁচ বছরে একবারও সাড়া দেননি শুভেন্দু। খাওয়া দাওয়া বন্ধ। শুধুমাত্র তরল খাদ্য ছাড়া কিছুই মুখে তোলানো যায় না। মলমূত্র নিজের হাতে পরিস্কার করেন বাবা-মা। ধীরে ধীরে অশক্ত হয়ে উঠছেন এই তরতাজা যুবক। ক্রমেই অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর সব রকম নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শুভেন্দুর নার্ভাস সিস্টেম কোমায় চলে গেছে। এই অবস্থা থেকে উন্নতি হওয়ারও কোনও আশা নেই। ছেলের এই অসহনীয় কষ্ট চোখে দেখতে পারছেন না মা-বাবা। অতএব বাধ্য হয়েই ছেলের মৃত্যু কামনা করছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: ডাক্তার নিগ্রহের রেকর্ড নেই সরকারের কাছে, ফের চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সময় স্বামী বা স্ত্রী তাঁর প্রিয়জনের হাত ছাড়িয়ে চলে যান। কিন্তু এক্ষেত্রে বেনজির ছিলেন শুভেন্দুর স্ত্রী মানসী। ঈশ্বরে ভরসা করে অলৌকিক কিছু ঘটবে এ আশায় খাবার এবং ওষুধ খাইয়ে, যত্ন নিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেছিলেন স্বামীকে। লাভ হয়নি। উল্টে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন মানসী। বাধ্য হয়ে শিশুপুত্র সমদর্শী সহ মানসীকে তাঁর বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দুর পরিবার। দু'বছর ধরে অসুস্থ শুভেন্দুর মা রীনাও। অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। তিনিও এখন ঠিকমতো সেবা করতে পারেন না ছেলের। এই অবস্থায় প্রতিদিন নিজের সন্তানকে মরতে দেখার যন্ত্রণা অসহনীয় যে কোনও বাবা-মায়ের কাছে।

শুভেন্দুর বাবা-মা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন, কোনওদিনই সুস্থ হবে না শুভেন্দু। তাই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। এখন অঙ্গদানের সুবিধা রয়েছে। আমরা চাই, আমাদের ছেলেও অন্যের মধ্যে বেঁচে থাকুক।" তাই স্বপ্নভাঙা হৃদয়ে ছেলের স্বেচ্ছামৃত্যু চাইছেন তাঁরা।

Advertisment