মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের একটি স্কুলে শিক্ষিকার চাকরি পেয়েছিলেন। যা নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক বাঁধে। অভিযোগ, মেধা তালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক হিসাবে অঙ্কিতা নিয়োগ পেয়েছিলেন। যা নিয়ে বঞ্চিত প্রার্থী মামলাও করেন আদালতে। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলার তদন্তভার সিবিআইকে করার নির্দেশ দিয়েছেন। কীকরে মন্ত্রী-কন্যার নিয়োগ হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এছাড়াও, বিচারপতির নির্দেশ, আজ রাত ৮টার মধ্যে মন্ত্রী পরেশ অধিকারীরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করুক। প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করতে পারবে সিবিআই।
পাশাপাশি, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রী পদ থেকে পরেশ অধিকারীকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে সুপারিশ করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে, যে সময় অঙ্কিতা অধিকারী চাকরি পেয়েছিলেন সেই সনয় পরেশবাবু মন্ত্রী ছিলেন না।
কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের পরই বন্ধ হয়ে গিয়েছে আদালত। ফলে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানানোর সুযোগ পাননি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী। এখন দেখার যে কোর্টের রায় মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই মামলার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনি নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরের হাজির হন কিনা।
'আইন আইনের পথে চলবে। ভুল থাকলে তদন্ত হবে। তবে আদালত যেন নিজের গণ্ডি অতিক্রম না করে।' এমনটাই জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
এ দিন শুনানি চলাকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এসএসসি-র চেয়ারম্যানের কাছে অঙ্কিতা অধিকারীর নিয়োগ নিয়ে জবাবদিহি চান। আদালত কক্ষ থেকে ভার্চুয়ালি এসএসসি-র চেয়ারম্যানকে শুনানিতে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি। তথ্য জানাতে ১০ মিনিট সময় নিয়েছিলেন এসএসসি-র চেয়ারম্যান।
অভিযোগ, কোর্টের নির্দেশে কোচবিহারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক নিয়োগের জন্য এসএসসি তালিকা প্রকাশ করেছিল। তফসিলি জাতিভুক্তদের জন্য মেধা তালিকার ওয়েটিং লিস্টে প্রথম স্থানে নাম ছিল ববিতা বর্মনের। ববিতা বর্মনের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল লোপামুদ্রা মণ্ডল ও ছায়া রায়ের নাম। অথচ পরবর্তীতে এসএসসি-র ওয়েবসাইটে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত আসনের ওয়েট লিস্টে দেখা যায় ববিতার নাম চলে গিয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। প্রথম স্থানে রয়েছে পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর নাম। এছাড়া, চাকরি প্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ের সময়েও অঙ্কিতাকে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। এরপরই ২০১৮ সালে আদালতে মামলা করেন ববিতা। প্রায় চার বছর পর সেই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ গল।
এসএসসি-র নিয়োগ নিয়ে এমনিতেই চরম অস্বস্তিতে রয়েছে রাজ্য সরকার। বাগ কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ, যে ৩৮১ জনের চাকরি হয়েছিল তাঁদের মধ্যে ২২২ জন পরীক্ষাতেই বসেননি। এবার খোদ মন্ত্রী কন্যার নিয়োগ নিয়েও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হল।