সিবিআই দফতরে পৌঁছেছিলেন নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট আগেই। গোয়েন্দারা বুধবার মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ঠিক ৬টা থেকেই জেরা শুরু করেছিলেন। প্রায় দু'দফায় চলে জিজ্ঞাসাবাদ। সাড়ে ৩ ঘন্টা ধরে মন্ত্রীকে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে জেরা করেন সিবিআই গোয়েন্দারা। এরপরই রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে আসেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী। তাঁর কনভয় মন্ত্রীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
কোর্টের রায় মেনে এসএসসি গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলায় বুধবার সিবিআই দফতরে হাজিরা হন মন্ত্রী। এসএসসি দুর্নীতি মামলায় এ দিন বড় ধাক্কা খেয়ছেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মেলেনি রক্ষাকবচ। তারপরই নিজাম প্যালেসে যান পার্থবাবু।
কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ চেয়ে পার্থবাবু ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছিলেন। কিন্তু, ওই আবেদনে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল বলে জানান বিচারপতিরা। তাই ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি আনন্দ কুমার মুখোপাধ্যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে রক্ষাকবচ নির্দেশ দিতে অস্বীকার করেন। এই মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কেই বহাল রাখা হয়।
ফলে সিঙ্গল বেঞ্চের রায় মেনে এসএসসি গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলায় বুধবার সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যেই পার্থবাবুকে নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দিতে হয়।
ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি আনন্দ কুমার মুখোপাধ্যায় জানান যে, নিয়ম মেনে মামলা দায়ের করা হয়নি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তরফে। লিখিত নয়, মৌখিক আবেদন করা হয়েছিল। তাই ডিভিশন বেঞ্চ কোনও রায় দিতে অস্বীকার করেছে। মৌখিক আবেদন দেখেই এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান দুই বিচারপতি।
এসএসসি গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কেই মান্যতা দিয়েছিল বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি আনন্দ কুমার মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ। অর্থাৎ এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে সিবিআই তদন্তই বহাল রাখার নির্দেশ হয়। এরপরই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন যে, বুধবার সন্ধে ৬-র মধ্যে নিজাম প্যালেসে সিবিআই গোয়েন্দাদের কাছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে হাজিরা দিতে হবে।
আদালত কী সময় বাঁধতে পারে? সিবিআইয়ের কাজ কি আদালত করে দেবে? এই প্রশ্ন তুলে বুধবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানান পার্থবাবু। যদিও পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা বলে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি আনন্দ কুমার মুখোপাধ্যায় এই আবেদনের শুনানি করেননি।
এই রায়ের আধ ঘন্টা পর বাড়ি থেকে বের হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গন্তব্য ছিল সিবিআই দফতর। এই দুর্নীতির নেপথ্যে কী অর্থের বিষয় জড়িত? কেন মেধা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব পেল না? প্রথম দফার জেরায় এইসব প্রশ্নই পার্থবাবুকে করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। পরে উপদেষ্টা কমিটির গঠন ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে বলে জানা যায়।
বুধবার সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন পার্থ চট্টোপাধ্যায় গঠিত এসএসসি দুর্নীতিকাণ্ড খতিয়ে দেখতে গড়া উপদেষ্টা কমিটির চার সদস্য এস পি সিনহা, অলোক সরকার, সুকান্ত আচার্য ও প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিজাম প্যালেসেের সামনে ভিড় রয়েছে। পুলিশি প্রহরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে ওই চত্ত্বর।
আরও পড়ুন- শাস্তি হোক দুর্নীতিগ্রস্তদের, তবে নিয়োগ যেন বন্ধ না হয়, দাবি SSC-র আন্দোলনকারীদের