এসএসসিকাণ্ডে অর্থ তছরুপের দায়ে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ইডি গ্রেফতার করেছে তাঁকে। মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা, সোনা, রূপো। বিরোধী শিবির নিশানা করছে মমতা সরকারকে। দলের অন্দরেও 'পার্থ হঠাও' দাবি উঠেছে। অর্থাৎ ঘরে-বাইরে চাপের মুখে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে আজ নজর ছিল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিকে। কৌতুহল ছিল যে আদৌ কী পার্থর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবে মন্ত্রিসভা। দেখা গেল কড়া পদক্ষেপই করা হল মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যারে বিরুদ্ধে। তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর পার্থর অব্যহতি সংক্রান্ত নোটিস জারি করেছেন মুখ্যসচিব।
রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'আপাতত পার্থদাকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। শিল্প, বাণিজ্য সহ ওঁর হাতে থাকা সব দফতরই আমার কাছে এল।'
পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। সেই সঙ্গেই পরিষদীয়, তথ্য ও প্রযুক্তি দফতরও তাঁর অধীনে ছিল। সবকটা দফতর থেকেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তারপরও মন্তরিসভা হোক বা দলীয় পদ থেকে পার্থকে বরখাস্ত করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আইনিভাবে দোষ প্রমাণ হলেই পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু, তৃণমূল মহাসচিব জানিয়েছিলেন, গ্রেফতারির সময় তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। সূত্রে খবর, এতেই ক্ষুব্ধ হন মমতা।
আরও পড়ুন- ড্যামেজ কন্ট্রোলে অভিষেক! আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা, নিয়োগ-আশ্বাস
এরপর বুধবার টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটির পর বেলঘরিয়ায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে আরও ২৮ কোটি টাকা সহ বিপুল সোনা, রূপো, নথি উদ্ধার হয়েছে। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। জনমানসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। কলঙ্কের দাগ লাগে জোড়া-ফুল ও মমতা সরকারের বিরুদ্ধে। ঘটনা মাথা হেঁট হয়ে যাওয়ার মত বলে দাবি করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
শুক্রবার সকাল থেকেই পার্থকে মন্ত্রিসভা ও দলীয় সব পদ থেকে সরানোর দাবিতে মুখর হন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা। টুইটে এই দাবি করেন কুণাল ঘোষ, দেবাংশু ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ দেবরা। এরপরই দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির বৈঠক ডাকেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাদারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থকে নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে খবর।
দুপুরে মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। সন্ধ্যায় কী তাহলে দলীয় সব পদ থেকে বরখাস্ত হবেন বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক? আপাতত নজর সেদিকেই।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অপসারণের পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, 'পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বলির পাঁঠা করা হল। একা পার্থ জড়িত নন। পুরো মন্ত্রিসভা জড়িত। দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। ফের ভোট হবে। তারপর দেখা যাবে মানুষ কাকে চায়।'
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহঃ সেলিম বলেছেন, 'পার্থকে একা অপসারণ করে হবে না। পুরো শিক্ষা দফতর এতে জড়িত। মুখ্যমন্ত্রী একজনকে ঝেড়ে ফেলে দুর্নীতি রুখতে পারবেন না। উনি এরপরও বলছেন না সব দফতরের দুর্নীতি বন্ধ করব। নিজেকে বাঁচাতে উনি শুধু দায় ঠেলার কাজ করছেন।'