Advertisment

খড়্গপুরের পর কি কালনা? তৃণমূল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে ময়দানে দলীয় কাউন্সিলররা

কালনা শহরবাসীর কথায় জানা গিয়েছে, বোর্ড গঠনের সময় থেকেই কালনা পৌরসভায় অশান্তি শুরু হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
kalna, TMC, district news,

ছবি প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

বোর্ড গঠনের পর থেকে এখনও এক বছর অতিক্রান্ত হয়নি। এরই মধ্যে চেয়ারম্যানের দুর্ব্যবহার ও অনৈতিক কাজকর্মের অভিযোগ নিয়ে চূড়ান্ত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা পুরসভায়। কার্যত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন দলেরই অধিকাংশ কাউন্সিলার। যা নিয়ে কালনা শহরের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী দলের নেতৃত্ব। চলতি মাসেই খড়্গপুরে ১৮ জন দলীয় কাউন্সিলর বিরোধিতা করায় সরতে হয়েছে পুরসভার চেয়ারম্যানকে।

Advertisment

কালনা পুরসভার বোর্ড মিটিং ছিল বুধবার। মিটিং শেষ হতেই সংবাদ মাধ্যমের সামনে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন অধিকাংশ কাউন্সিলর । তাঁরা অভিযোগ, এখন টাকার বিনিময়ে মিলছে ওয়ারিশন সার্টিফিকেট। এছাড়াও পুরসভার সই ছাড়াই বাড়ি তৈরির অনুমতি পত্র মিলে যাচ্ছে। অভিযোগের এখানেই শেষ নয়। চেয়ারম্যান আনন্দ দত্তের বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি নিয়ে বিয়ে বাড়ি ও পার্টির মিটিংয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগও এনেছেন বিক্ষুব্ধ কাউন্সিররা। এদিন তাঁরা জানিয়ে দেন, পৌর এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার পাশাপাশি কোনও কাজে চেয়ারম্যান সহযোগিতা করেন না। তাই তাঁরা চান অবিলম্বে চেয়ারম্যান পদ থেকে আনন্দ দত্তকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব।

কাউন্সিলর সুনীল চৌধুরী কোন রাখঢাক না রেখে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এখন ৪ হাজার টাকা দিলেই ওয়ারিশন সার্টিফিকেট বেরিয়ে যাচ্ছে। পুরসভার সই ছাড়াই ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে বাড়ি তৈরির অনুমতি মিলছে। দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা কর্মচারীদের চেয়ারম্যান সমর্থন করছেন। এছাড়াও ব্যক্তি বিশেষে জমির মিউটেশনের কাজ আটকে দেওয়া হচ্ছে। এসবের জন্য কালনাবাসীর কাছে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।" সুনীল চৌধুরী আরও বলেন, 'পুরসভার আয় থমকে গিয়েছে। পেনশনের টাকা দিতে অসুবিধা হচ্ছে। পুরসভার কোনও উন্নতিও হচ্ছে না।কালনা পুরসভার ভালো আয়ের পথ ছিল ফেরিঘাট।সেটিও চেয়ারম্যান আনন্দ দত্তের জন্য নষ্ট হয়েছে। রাজ্য সরকারের শিক্ষানীতি নিয়ে চেয়ারম্যানের বিরোধী বক্তব্যে দলকে অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। এই সমস্ত বিষয় দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।' দলীয় নেতৃত্ব কি ব্যবস্থা নেয় সেদিকেই এখন অধিকাংশ বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলর তাকিয়ে আছেন বলে সুনীল চৌধুরী জানিয়েছেন। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে চেয়ারম্যান আনন্দ দত্ত কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

কালনা শহরবাসীর কথায় জানা গিয়েছে, বোর্ড গঠনের সময় থেকেই কালনা পৌরসভায় অশান্তি শুরু হয়। গত ১৪ ই ডিসেম্বর পুরসভায় বোর্ড মিটিং চলাকালীন কাপ ছুড়ে মেরে এক কাউন্সিলরকে জখম করার ঘটনার কথা এখনও কালনাবাসীর মুখে মুখে ফিরছে। এখন আবার পুরসভার অধিকাংশ কাউন্সিলর চেয়ারম্যানের বিরদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। এমনকি বিক্ষুব্ধরা এও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আনন্দ দত্তকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো না হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। এইসব ঘটনা কালনাবাসীকে হতাশ করেছে বলে বিরোধীরা দাবি করেছে। জেলা বিজেপির সহ সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “করে খাওয়া নিয়ে সর্বত্রই এখন তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে উঠেছে। কালনা পুরসভার ঘটনা তার ব্যতিক্রম নয়“।

সম্প্রতি খড়্গপুর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার পদত্যাগ করেন। তৃণমূলের ১৮ জন কাউন্সিলর দলীয় চেয়ারম্যানের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে একযোগে প্রদীপ সরকারকে সরানোর দাবি তোলেন। কালনা পুরসভার ক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটে কিনা সেদিকেই নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।

Kalna tmc
Advertisment