ফি দিন দূরদুরান্ত থেকে রোগীরা আসেন। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই আর জি করের ওপিডির লাইনে লম্বা ভিড়। সকাল ৯টা'য় দেখা গেল ভিড়ের চাপ অনেকটাই বেশি। ডিজিটাল জমানায় বেড়েছে প্রযুক্তি নির্ভরতা। অথচ শহরের অন্যতম বড় হাসপাতালে রোগীর ভিড় সামাল দিতে কেন সেই প্রাচীন পদ্ধতি! প্রশ্ন তুলেছেন রোগী ও আত্মীয়রা। শান্তিপুর থেকে ওপিডি বিভাগে চিকিৎসা করতে এসেছেন শান্তিপ্রসাদ দাস। তিনি জানান, "এত বড় হাসপাতাল! এত রোগীর ভিড়, লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার বিকল্প পদ্ধতি যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভাবেন তাহলে আমাদের মত জেলা থেকে যে সকল রোগী আসছেন তাদের পরিষেবা পেতে আর একটু সুবিধা হবে"।
উত্তর ২৪ পরগনার একটা বড় অংশের রোগীকে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করে শহরের এই অন্যতম বড় হাসপাতাল। ভিড়ের চাপও যথেষ্ট। সেক্ষেত্রে পরিষেবার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগীদের একাংশ। বসিরহাট থেকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন শেখ ইনতিয়াজ আলি। তিনি বলেন, "প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে ঠায় লাইনে দাঁড়ানো, অসুস্থ শরীরের এতক্ষণ সময় অপেক্ষা করা সত্যিই কষ্টকর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে তাহলে পরিষেবা আরও ভাল করা সম্ভব"।
একটু এগোতেই দেখা মিলল, সুদর্শন মাইতি নামের বছর ৩৫ এর এক যুবকের। তাঁর এক আত্মীয়কে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই অপেক্ষা করছেন। কেন এখানে অপেক্ষা করছেন জানতে চাইলেই সাফ জবাব, "বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীদের চাপ বাড়তে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই রোগীদের ট্রলি পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়"। পাশাপাশি পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে রোগীদের তরফে।
পাইক পাড়ার বাসিন্দা, সুজয় দত্ত বলেন,"ওপিডিতে দেখানোর পর অনেক ওষুধই হাসপাতালে পাওয়া যায়না। বাইরে থেকে কিনতে হয়। এমনকী ইনডোরে ভর্তি থাকা রোগীদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের লেখা রিকুইজেশন নিয়েও বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। ২০০থেকে ২৫০ টাকার ওষুধ কিনতে হয় রোগীদের। সরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামো আরও উন্নত করার দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি হাসপাতালের ইমার্জেন্সির সামনে অপরিছন্নতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসা করতে আসা রোগীদের একটা বড় অংশের।
যদিও এই প্রসঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, "একটা সময় ট্রলির সমস্যা ছিল এটা অস্বীকার করছি না। তবে সেই সমস্যা এখন অতীত। প্রতিদিন মনিটরিং এবং নতুন ট্রলি কেনার মাধ্যমে পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দেওয়া গিয়েছে। রোগী স্বার্থ আমদের প্রথম আগ্রাধিকার। আমরা পরিষেবা নিয়ে কোন আপোস করি না। যে কোন অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে সেই সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়"।