কোজাগরী পূর্ণিমা। ধনের দেবী লক্ষ্মীর আরাধনার দিন। ঘরে ঘরে পুজো হচ্ছে দেবী লক্ষ্মীর। ধনদেবীর আরাধনা থেকে পিছিয়ে নেই রাজ্যের যৌনকর্মীরাও। রাজ্যের শিল্পশহর দুর্গাপুরেও দেখা মিলল সেই ছবি। আর পাঁচ জন সাধারণ মেয়ের মতই ঘরে আলপনা দিয়ে কোজাগরী লক্ষ্মীর আরাধনায় ব্রতী হলেন যৌনকর্মীরা।
ঘরের মেয়ে উমার বিদায়ের পর পরই ঘর আলো করে প্রবেশ করেন দেবী লক্ষ্মী। তিনি শুধু ধনসম্পদই নয়, সৌভাগ্য এবং সৌন্দর্যেরও দেবী। দুর্গাপুজোর পর আশ্বিনের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। এই সময় দেবী লক্ষ্মীর পুজোকে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো বলা হয়। বাংলার ঘরে ঘরে কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মীপুজোর ঐতিহ্য রয়েছে দীর্ঘকাল। এই সময় দেবীর পুজো করে তাঁকে ঘরে আনলে গৃহে ধন-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায় বলেই বিশ্বাস ভক্তদের।
আর, এই সুখ-সমৃদ্ধির জন্যই সাধারণ ঘরের গৃহিণীদের মতই, লক্ষ্মীপুজোর আয়োজনে দ্বিধা করেন না পতিতালয়ের যৌনকর্মীরাও। পরিবারের শান্তি কামনায় দুর্গাপুরের কাদারোড যৌনপল্লিতে তাই দেখা গেল, পূজিতা হচ্ছেন মহালক্ষ্মী। ফল কাটা থেকে আলপনা দেওয়া, সবই যৌনকর্মীরা করছেন নিজেরা।
আরও পড়ুন- বর্ণহীন হিন্দু সমাজের আহ্বান আরএসএস প্রধান ভাগবতের, নজর ঘোরাতে? প্রশ্ন নানা মহলের
যাঁদের অচ্ছুত বলে সামাজিক উৎসব থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়, এই ঘরের পুজোয় সেই যৌনপল্লির মেয়েরা নিজেরাই ফল কাটেন, ভোগ রান্না করেন। ইচ্ছেমতো পুজো করেন, দেবীর পুষ্পাঞ্জলি দেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। দুর্গাপুজোর পর আবারও ধুমধাম করেই পুজোর শব্দ শোনা যাচ্ছে যৌনপল্লিতে।
এই যৌনপল্লির মাটি ছাড়া দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরি হয় না। রবিবার সেখানেই মহাশক্তি দেবী ধরা দিলেন লক্ষ্মী রূপে। বছরের আর পাঁচটা দিন এমনটা কাটে না আলোকহীন স্যাঁতস্যাঁতে যৌনপল্লির গলির আনাচ-কানাচ। রবিবার কিন্তু, সেখানেই কান পাতলে শোনা গেল লক্ষ্মীর পাঁচালির পাঠ। আচারে কোনও খামতি রইল না। পুরোহিতকেও দেওয়া হল নিয়মমাফিক দক্ষিণা। উপবাস-সহ অন্যান্য নিয়ম পালন তো ছিলই। এখানকার বাসিন্দারা রবিবার যেন ফিরে গেলেন তাঁদের যৌনপল্লিতে চলে আসার আগের জীবনে।