এই প্রচন্ড দাবদাহে শুধু মানুষ নয় পশুপাখিও সানস্ট্রোক এ আক্রান্ত হচ্ছে। যেরকম হুগলির রাজহাট অঞ্চলে বেশ কিছু ময়ূর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হুগলির রাজহাট এলাকার গান্ধীগ্রাম, নন্দীপুর এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে কয়েকশ ময়ূরের বাস করে দীর্ঘদিন ধরেই। কুন্তী নদীর ধারে ঘন আমবাগানে ঘেরা এই এলাকাগুলোতে ঠিক কবে থেকে ময়ূর বাসা বেঁধেছে সেটা কেউ বলতে পারবেন না, তবে দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় মানুষ জন তাদের দেখছেন। শুধু দেখছেন বললে ভুল হবে, গান্ধীগ্রাম এলাকার কয়েকটি বাড়ি তাদের প্রায় সন্তানের মতো দেখেন। এ
রকম একটি পরিবার কল্যা পরিবার। তাঁরা সারাবছর ময়ূরগুলিকে খেতে দেন, তাদের শরীর খারাপ হলে শুশ্রূষাও করেন। প্রচন্ড গরমে একটি ময়ূর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে সেবাশুশ্রূষা করছেন কল্যা পরিবারের গৃহবধূরা। স্থানীয় পশু চিকিৎসক এসে দেখে নিদান দিয়েছেন প্রচন্ড গরমের ফলেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে ময়ূরটি।
আসলে দীর্ঘ আমবাগান জুড়ে তাদের অবাধ বিচরণ। জল খাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি পুকুর, নয়ানজুলিও আছে। আছে কুন্তী নদীও। কিন্তু এই প্রবল গরমে নদীনালা শুকিয়ে যাওয়ায় ময়ূরের দল জল পাচ্ছেনা। তাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। জাতীয় পাখি হলেও এখানে ময়ূরের দল কোনও অজ্ঞাত কারণে দুয়োরানী হয়ে আছে। কল্যা পরিবারের এক গৃহবধূ মন্দিরা কল্যা বলেন, 'প্রশাসনের স্বদিচ্ছা ছাড়া এই ময়ূর গুলির উন্নতি অসম্ভব। আমরা যেটুকু পারি করি কারণ এরা আমাদের পরিবারের সদস্য বলেই মনে করি। একমাস ধরে একটি অসুস্থ ময়ূরকে আমরা ওষুধপথ্য দিয়ে টিকিয়ে রেখেছি। আপাতত সে কিছুটা সুস্থ।'
সব শুনে হুগলির পরিবেশপ্রেমী যুবক চন্দন ক্লেমেন্ট সিং গিয়েছিলেন রাজহাটে। সেখানে গিয়ে তাঁর উপলব্ধি, 'বাগানের পর বাগান কেটে সাফ হয়ে প্লট তৈরি হচ্ছে, ময়ূর তাহলে যাবে কোথায়? এতদিন তারা গাছে গাছে গভীর বনে খেলে বেড়াতো। এছাড়া পুকুর গুলি শুকিয়ে গিয়েছে, যেসব পুকুরে জল আছে সেগুলো চারপাশে নেট দিয়ে ঘেরা তাই তারা জল টুকুও খেতে পারছে না।' তিনি গিয়ে বাড়ি বাড়ি অনুরোধ জানান, গাছের ডালে ডালে জল ভরা পাত্র যদি ঝুলিয়ে দেওয়া যায় তাহলে অন্তত এই গরমে ময়ূরগুলো জলটুকুও খেতে পারে। অন্যদিকে বিখ্যাত পশু চিকিৎসক কুনাল চক্রবর্তী সব শুনে জানান, 'মানুষের মতো পশুদের দেহেও জল কমে গেলে সানস্ট্রোক হয়।'