শীতের ছুটির দিন যেমনটা হয় আর কী! ফুরফুরে মেজাজ, সকাল সকাল ট্রামে বাসে করে চলে আসা ময়দান। কাগজ বিছিয়ে বসে পড়া। কারোর সঙ্গে কমলা লেবু। সেদ্ধ ডিম থাকলে তো কথাই নেই। রবিবার না হয়েও রবিবারের সবটুকু মেজাজ ধরে রাখা ফুরফুরে এক মাঘ দুপুর। হ্যাঁ, ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেডের সমাবেশ কিন্তু অনেকের কাছেই ছিল এইরকম।
আনুমানিক ১০ লক্ষ মানুষের ভিড় হয়েছিল সমাবেশ। ভিড়ের বেশির ভাগ মুখ জিগনেশ মেভানির নাম শোনেনি। শত্রুঘ্ন সিনহাকে ওঁরা দেখেছে রুপোলী পর্দায় অন্য ভূমিকায়। রাজনীতির টানে নয়, বেশির ভাগই এসেছে কলকাতার বুকে হালকা শীতে আমুদে একটা দিন কাটাবে বলে। মঞ্চের বহু দূর থেকে 'দিদি'-কে ভাল দেখা যায় না। মোবাইলে জুম করে তাও কিছু খিচিক খিচিক। বাড়ি গিয়ে আর নিজের কাছের মানুষকে দু'টো গল্প তো করা যাবে।
গান শুনে, ভাষণ শোনার ইচ্ছে কমতে থাকলেই টুক করে ঘুরে আসা যায় ভিক্টোরিয়া। খানিক সেলফি তোলা। সমাবেশের অনেক মুখই কলকাতায় একেবারে নতুন। পথচারী কিমবা আশেপাশের মানুষের মুখেই জেনে নেওয়া গেল জাদুঘর ঠিক কত দূর। পলাশী থেকে আসা পিন্টু মাহাতোদের কথাই ধরা যাক। বন্ধুদের নিয়ে প্রথমবার এসেছেন ব্রিগেডে। একদুপুরে মহানগরের 'বীভৎস মজা'র যতটুকু চেখে নেওয়া যায়।
সমীরণ দেব এসেছে মালদা থেকে, ভাষণ সবে শুরু হয়েছে কী হয়নি, এর মধ্যেই সমীরণরা খুঁজে বের করে নিলেন জমিয়ে সস্তায় ডিম-ভাত খাওয়ার জায়গা। জমিয়ে, বেশ রসিয়ে বসিয়ে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। রাস্তার দু'পাশে রয়েছে ৪০ টাকার শাড়ি কিম্বা ৫০ টাকার জিন্সের পশরা। শীত যদিও যাই যাই, তাও আসছে বছরের কথা ভেবে ১০০ টাকায় ব্লেজারের দিকেও হাত বাড়ালেন অনেকেই।
ক্ষমতায় দিদি থাক বা মোদী, বেঁচে থাক ব্রিগেড। ২০ টাকার ডিম ভাত আর ভিক্টোরিয়ার টানেই ওরা বছর বছর ভিড় করুক কলকাতায়। বিকেলের রোদ একটু পড়ন্ত হতেই, পাতলা হল ভিড়। এবারের মতো ফুরল ব্রিগেড-পিকনিক। আসছে বছর আবার হবে।
ছবি- শশী ঘোষ (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)