Advertisment

জৌলুস কমলেও অটুট সাবেকিয়ানা, মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাসটা সত্যিই বেশ রঙিন!

পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজবাড়ির পুজোও বাংলার সাবেকি পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
peoples still gathers during puja days to witness Durga Puja at Mahishadal Rajbari

মহিষাদল রাজবাড়ি।

উৎসবের বাংলায় এখন থিমের রমরমা। মণ্ডপসজ্জা থেকে শুরু করে প্রতিমা সবেতেই থিমের ছোঁয়া। তবে থিমের পুজোর সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে চলেছে সাবেকি পুজোগুলোও। শহর থেকে জেলা, সময় পেরোলেও এখনও অটুট সাবেকিয়ানার সেই জৌলুস। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজবাড়ির পুজোও বাংলার সাবেকি পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম।

Advertisment

মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস…

রানি জানকীর আমলে আনুমানিক ১৭৭৬ সালে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়। সেই সময় থেকেই রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। রাজত্ব চলে যাওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর জৌলুস কমেছে। কিন্তু নিয়ম-আচারে ছেদ পড়েনি। তাই প্রথা অনুযায়ী মহালয়ার পরেরদিন অর্থাৎ প্রতিপদের দিন ঘট স্থাপন করে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। পুজোয় ১০৮টি নীলপদ্ম দেওয়ার চলও রয়েছে, যা আগে আসত উত্তরপ্রদেশ থেকে। কিন্তু এখন তা আর হয় না, সাদা পদ্মেই মায়ের পুজো হয়। আগে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় যাত্রাপালা, ভোগ বিতরণ, কামান দেগে সন্ধিপুজো, বিসর্জনের শোভাযাত্রা সবই হত। পুজোর দিনগুলিতে ঠাকুরদালানেই যাত্রা হত। রাজবাড়ির মহিলারা পর্দার আড়াল থেকে যাত্রা দেখতেন।

পুজোর দিন অনুযায়ী ভোগ রান্না হত। যেমন, ষষ্ঠীতে ছয় মন, সপ্তমীতে সাত মন, অষ্টমীতে আট মন, নবমীতে নয় মন চালের প্রসাদ তৈরি করে বিতরণ করা হত। এখন তা আর সম্ভব হয় না। অষ্টমীর সন্ধ্যায় কামান দেগে রাজবাড়ি-সহ আশেপাশের এলাকার পুজোমণ্ডপে সন্ধিপুজো শুরু হত। দশমীতে বড় নৌকায় করে শোভাযাত্রা বের হতো এবং রাজবাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া হিজলি টাইডাল ক্যানাল হয়ে গেঁওখালিতে রূপনারায়ণ নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত। এখন সে সবই অতীত। রাজত্ব ঘোচার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রাপালা বন্ধ হয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে অবশ্য এখনও ভোগ রান্না করা হয়।

মহিষাদল রাজবাড়ির পুজোর নিয়ম-রীতি…

মহিষাদলের প্রাচীন রাজবাড়ির পুজো দেখতে আজও ভিড় লেগেই থাকে। পুরনো নিয়ম মেনেই প্রতিপদে ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। প্রায় ২৫০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই দুর্গাপুজো দেখতে আজও ভিড় জমান দূরদূরান্তের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতিমা দর্শনে আসেন ভিন জেলা এমনকী রাজ্যের দর্শনার্থীরাও।

publive-image

আগে এই কামান দেগেই রাজবাড়িতে সন্ধিপুজো শুরু হতো। তবে আজ সেসব অতীত।

আরও পড়ুন- পুজোয় নিয়ম করে এবাড়িতে আসতেন নেতাজি, শতাব্দীপ্রাচীন এই দুর্গাপুজো আজও চর্চাবহুল!

মহালয়ার পরের দিন রাজবাড়ির দুর্গামণ্ডপ লাগোয়া অশ্বত্থ গাছের তলায় নটি ঘট ওঠে। ষষ্ঠী থেকে প্রতিদিনই ঘটপুজো হবে। সপ্তমী থেকে মূর্তি পুজো হয়। প্রতিমার একপাশে ঘট, অন্যপাশে ধান রাখা হয়। এই দুর্গাপুজো করার পরই শুখা গ্রামে ধান ফলেছিল। তাই ভালো ফসলের আশায় আজও দেবীর পাশে ধান রাখা হয়। এই ধানের বীজের অঙ্কুর থেকেই পূর্বাভাস পাওয়া যায় এলাকায় ফসল কেমন হবে।

বর্তমানে যেভাবে চলে এই রাজবাড়ির পুজো…

রাজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবি গান হলেও এখন আর হয় না যাত্রাপালা। কামানের পরিবর্তে আতসবাজি পোড়ানো হয়। সরকার কামান দাগায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তাই সেটাও ইতিহাসের খাতায় চলে গিয়েছে। এখন কামান দাগার পরিবর্তে আতসবাজির রোশনাইয়ের মধ্য দিয়েই মহিষাদল রাজবাড়িতে সন্ধিপুজো করা হয়। বিসর্জনের শোভাযাত্রাও আজ অতীত। রাজবাড়ি লাগোয়া রাজদিঘিতেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। তবে আড়ম্বর কমলেও ঐতিহ্যের টানে আজও বহু মানুষ মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় সামিল হন।

publive-image

মহিষাদল রাজবাড়ির সংস্কারের কাজ চলছে।

দর্শনার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, তার জন্য বর্তমান রাজ পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি নজরে রেখেছেন। পুজোয় আগত দর্শনার্থী বা পর্যটকদের পরিষেবা দিতে এখানে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে গ্যাঁটের কড়ি খরচ করেই আপনাকে থাকতে হবে। মহিষাদল রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্ম হিসাবে রাজবাড়ি দেখাশোনা করে থাকেন শংকরপ্রসাদ গর্গ ও হরপ্রসাদ গর্গ। রাজবাড়ির পুজো দেখতে এবং রাজবাড়ির অপরূপ পরিবেশের অনুভূতি নিতে হলে আসতেই হবে মহিষাদলে।

আরও পড়ুন- ‘ঈশ্বরের’ তালিমেই দুর্গামূর্তি গড়ে চলেছেন নূর মহম্মদ, প্রাণের পুজোয় সম্প্রীতির অপরূপ ছবি

মহিষাদলের প্রাচীন ঠাকুরদালানটি একটা সময়ে ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছিল। পুজোর সময় ভীষণ সমস্যা হতো। দর্শনার্থীদের কথা ভেবে স্থানীয় বিধায়কের উদ্যোগে সেই ঠাকুরদালান নতুন করে তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এরাজ্যের পাশাপাশি ভিন রাজ্যের বহু মানুষও এখানে রাজবাড়ি ও রাজবাড়ির পুজো দেখতে আসেন। তাঁদের কথা ভেবে রাজ পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসন রাজবাড়িকে সাজিয়ে তোলার কাজ চালাচ্ছে।

West Bengal Purba Medinipur durgapuja 2023 Mahishadal Rajbari Mahishadal Rajbari Durga Puja
Advertisment