Advertisment

কলকাতার রাস্তায় তাপ্পির পর তাপ্পি, অধরা স্থায়ী সমাধান, চেনা দায় ঠেলাঠেলিতে পোর্ট-কেএমসি

রোদে, জলে দিন কয়েকের মধ্যে তারও অবস্থা হয় তথৈবচ। ফল যে-কে সেই। অতএব হয়রানিই যেন দস্তুর।

author-image
Rajit Das
New Update
pitch tappi on the streets of kolkata Port trust and kmc is busy pushing liability, কলকাতার রাস্তার অবস্থা নিয়ে দায় ঠেলাঠেলিতে পোর্ট-কেএমসি

চলছে রাস্তা সারাইয়ের কাজ। ছবি- শশী ঘোষ।

খাস কলকাতায় ভাঙা পথে ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি। ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বাসিন্দা থেকে পথ চলতি জনতা। তারপরই অসন্তোষে প্রলেপ দিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পুরসনিগম, পোর্টট্রাস্ট। শুরু হচ্ছে পিচের তাপ্পি মারার কাজ। রোদে, জলে দিন কয়েকের মধ্যে তারও অবস্থা হয় তথৈবচ। ফল যে-কে সেই। অতএব হয়রানিই যেন দস্তুর। সমস্যার সুরাহা আদৌ স্থায়ীভাবে হবে? জবাবে পুরনিগম, পোর্ট ট্রাস্ট একে অন্যের ঘাড়ে দায়ে চাপাচ্ছে। দোষারোপের খেলায় নাজেহাল হতে হচ্ছে আম আদমিকে।

Advertisment

গত শনিবারই খিদিরপুরের বাবুবাজারে সারের বস্তা বোঝাই লর চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় কাউন্সিলর রাম পেয়ারিরামের ছেলে রামকিঙ্করের। যা নিয়ে তোলপাড় অবস্থা। ওই রাস্তা পোর্টট্রাস্টের অধীনে বলে সুর চড়িয়েছে কলকাতা পুরনিগম। প্রাণহানির কয়েক ঘন্টা পরেই অবশ্য কাটাপুকুর রোড ও সংলগ্ন এলাকায় রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু, রাবিশ ফেলে সেই কাজ টিঁকবে কতদিন তা নিয়েই প্রশ্ন। স্থানীয় বাসিন্দা অশোক কুমার মিশ্রা বলেন, 'সারাইয়ের কাজ অনের দিন পরে হচ্ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। জানিয়েও লাভ হয় না। এখন ভিআইপি লোকের ছেলের মৃত্যু হয়েছে তাই দ্রুত রাস্তা মেরামতি হচ্ছে। এও বেশি দিন টিঁকবে না।' আরেক বাসিন্দা গুলামের কথায়, 'গত ছয় মাসে এই নিয়ে তৃতীয় দুর্ঘটনা। ২০১৮-র পর কাটাপুকুরের এখন রাস্তা মেরামতি হচ্ছে। যেটা আসল কাজ সেটাই হয় না।'

publive-image
রাস্তার কঙ্কালসার অবস্থা।

পোর্ট ট্রাস্ট নিজের আওতাধীন রাস্তার কাজ শুরু করেছে। শনিবারের দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা পুরনিগমও। মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে, বাগবাজার, গ্যালিফ স্ট্রিট, ভূপেন বোস এ্যাভিনিউ, আর জি কর রোড, ভূপেন বোস এ্যাভিনিউ, রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র রোড, মিল্ক কলোনি, বেলেঘাটা মেইন রোড, সিআইটি রোড, ই এম বাইপাসে। বৃষ্টি থামলে শহরের অন্যান্য রাস্তাগুলোও সারাই হবে বলে জানিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের তরফেও শহরের ১১৭টা রাস্তা মেরামতির জন্য পুরনিগম চিঠি দেওয়া হয়েছিল।

তাপ্পি বা পিচের উপর প্রলেপ দিতে আগেই নিষেধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, রাস্তা সারাইয়ের কাজে তারপরও বড় বদল আসেনি। ফলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে এই ধরণের মেরামতিতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও স্থায়ী সমাধান কবে হবে? কেন কাজে খামতি থেকে যাচ্ছে?

publive-image
বাইপাসে রুবি মোড়ের অবস্থা

পৌর্ট ট্রাস্টের তরফে মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'কাটাপুকুরের দুর্ঘটনা নিয়ে সংস্থা একটা তদন্দ কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া বলতে পারি, ২০১৮-তে সারাইয়ের পর ওই রাস্তা ২০১৯ সালে জলের লাইনের জন্য খোঁড়াখুরি হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে সারাইয়ের পর ভূগর্ভস্থ কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়া হয়। যার দরুন রাস্তায় তাপ্পির কাজ করতে হয়। যা থেকে রাস্তা খারাপ হয়ে যায়।'

তাহলে কী কোথাও পুরনিগমের সঙ্গে পৌর্ট ট্রাস্টের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে? কলকাতা পুরনিগমের মেয়র পারিষদ (সড়ক) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় সরাসরি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাঁধেই দায় চাপিয়েছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে অভিজিৎবাবু বলেছেন, 'বছরে রাস্তা নিয়ে পোর্টের সঙ্গে দু'টি সমন্বয় বৈঠক হয় পুরনিগমের। সেখানে বারবার খারাপ রাস্তা মেরামতির কথা বলা হয়। কিন্তু কাজ করে না ওরা। দুর্ঘটনা ঘটলে নড়েচড়ে বসে। এখন শুনছি কাউন্সিলরদের ওরা ওদের ইঞ্জিনিয়রদের নম্বর দিয়েছে। পোর্টের আওতাধীন রাস্তা খারাপ থাকলে সেটা ওই ইঞ্জিনিয়রদের জানাতে হবে। সবটাই যেন রোগী মরে গেল তারপর ডাক্তার ডাকা হল।'

publive-image
কলকাতার বন্দর এলাকার রাস্তা

কলকাতা পুরসভার রাস্তায় তাহলে কেন তাপ্পির কাজ? মেয়র পারিষদ (সড়ক) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, 'আমাদের এলাকায় রাস্তার একেবারে বেহাল অবস্থা এমনটা হয়টা হয়না। খারাপ হলে বা গর্ত হয়ে গেলেই কাজ হয়। আর বর্ষার শুরুতে বৃষ্টি, রোদে রাস্তা খারাপ হবেই। খারাপ রাস্তাগুলোতে সারাইয়ের কাজ হচ্ছে। আসা করছি পুজোর আগেই সব মেরামতি হয়ে যাবে।'

স্থির হয়েছে আগামী সপ্তাহেই কলকাতা পুরসভা ও পোর্ট ট্রাস্টের কর্তারা শহরের রাস্তা মেরামতি নিয়ে বৈঠক করবেন।

আরও পড়ুন- অ্যাপ ক্যাবে উঠলেই ‘ছ্যাঁকা’, যাত্রী সুরাহায় দ্রুত রাজ্যের নির্দেশিকা কার্যকরের দাবি

kolkata Kolkata Municipal Corporation KMC kolkata road condition bad
Advertisment