অক্সিজেন ছাড়াই ‘দুর্গম পর্বতশৃঙ্গ’ জয় করতে ভয়াবহ তুষারঝড়ের মুখে পড়েন পিয়ালি বসাক। অদম্য জেদ আর মনের জোরকে সঙ্গী করেই বেঁচে ফিরে আসেন তিনি। এরপর স্রেফ মনের জোরকে সঙ্গী করেই একের পর এক দুর্গম পাহাড় জয়। দেনার দায়ের সেই পিয়ালিই এখন বসছেন মেলার স্টলে। সামান্য কিছু আয়ের লক্ষ্যে। বিক্রি করছেন পাহাড়ে চড়ার জুতো, জ্যাকেট।
মাউন্ট এভারেস্ট ছাড়াও একের পর এক ছ’টি আট হাজারি শৃঙ্গ জয়ের শিরোপা রয়েছে তার কাঁধেই। আগামী পরিকল্পনা কাঞ্চনজঙ্ঘা ছোঁয়ার। তবে তার আগে আর্থিক সংকট ভাবাচ্ছে পিয়ালিকে। বারে বারে মিলেছে প্রতিশ্রুতি কিন্তু আদৈও রাজ্য কিংবা কেন্দ্রের কাছ থেকে মেলেনি আর্থিক সহযোগিতা। দেনার দায়ে বাংলার সেই 'অগ্নিকন্যা' পিয়ালি বসাককে বসতে হল মেলায়।
হ্যাঁ শুনতে অবাক লাগলেই এটাই বাস্তব। পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা পিয়ালিকে ছোট থেকে পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে টানে। আর সেই টানেই বারে বারে পাহাড়ে ফিরে ফিরে যাওয়া….! এসেছে মৃত্যুভয়, প্রতিপদেই বিপদের হাতছানি… তাও অদম্য জেদ কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারেনি পিয়ালির পাহাড় জয়ের খিদেকে।
আরও পড়ুন : < পড়াশুনা চালাতে ভরসা চায়ের দোকান, ‘সোনার মেয়ের’ তাক লাগানো সাফল্য অবাক করবেই >
সম্প্রতি অন্নপূর্ণা (৮,০৯১ মিটার) এবং মাকালু (৮,৪৮১ মিটার) জোড়া শৃঙ্গ জয় করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ভারেস্ট জয় করার পরও বসে থাকার পাত্রী নন তিনি। মাথার ওপর লক্ষাধিক টাকার দেনা। তাতে কি হয়েছে? পাহাড়ের ‘অদম্য টান’ ছেড়ে তিনি বের হতে পারা কি এতই সহজ? সেই টানেই বারে বারে পাহাড়ে ছুটে যাওয়া। কিন্তু এবার সত্যি দেনার দায় ভাবাচ্ছে পিয়ালিকে। ব্যাঙ্ক লোন রয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা। তার ওপর জোড়া শৃঙ্গ জয়ে ৩০ লক্ষের দেনা। কীভাবে মেটাবেন জানেন না পিয়ালি।
২৩ তম চন্দননগর বইমেলায় সামান্য আর্থিক সুরাহার লক্ষ্যে দিয়েছেন ছোট্ট স্টল। সেই স্টলেও রয়েছে পাহাড় জয়ের নানান সরঞ্জাম। রয়েছে জ্যাকেট, জুতো। সেগুলো বিক্রি করেই কিছু লাভের আশায় স্টলে বসেছেন পিয়ালি ও তার বোন।
পিয়ালি বলেন, “দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে কোথায় ভালো জিনিস কম দামে পাওয়া যায় আমি জানি। সেগুলিই নিয়ে এসেছি। ভাবলাম বিক্রি হলে কিছু পয়সা তো আসবেই।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন, মানুষজন আসছেন আমার সঙ্গে ছবি তুলছেন আমার পাহাড় জয়ের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছি সকলের সঙ্গে"। বারে বারে আবেদন করেও মেলেনি সরকারি সাহায্য"।
আরও পড়ুন : < রথের শহরে ছুটছে বন্দে ভারত, বৃদ্ধের অবাক করা কীর্তি এখন জোর চর্চায় >
কিছুটা অভিমানের সুরে পিয়ালি বলেন, "বারে বারে মিলেছে আশ্বাস। আমার মত যারা পাহাড় জয় করতে চান স্রেফ সামান্য কটা টাকার জন্য তারা পিছিয়ে আসছেন। আমি আগেও সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে আবারও জানাচ্ছি অনান্য খেলাধূলার মত সরকারের তরফে যদি পর্বত অভিযানকে উৎসাহ দেওয়া হয় তাহলে গ্রাম বাংলার অনেক প্রতিভা এগিয়ে এসে ইতিহাস গড়বে। আমার লড়াই টা মূলত সেই লক্ষ্যেই"। আগামী দিনে মেয়েরা যাতে পর্বত অভিযানে আকৃষ্ট হয় তাঁর জন্য সরকারের এগিয়ে আসা উচিত বলেও পিয়ালী জানিয়েছেন।