আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের পর্দাফাঁস খাস বাংলায়। কল সেন্টারের আড়ালে দেদার প্রতারণা। টার্গেট মূলত বিদেশে থাকা প্রৌঢ়রা। অনলাইন বিপণির মোড়কে লোভনীয় অফারেই অ্যাকাউন্ট সাফ! দিনর পর দিন খাস কলকাতার নাগের ডগায় বসে চলছিল এই কারবার। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে হানা পুলিশের। চক্রের ৮ পাণ্ডা গ্রেফতার। বাজেয়াপ্ত একগুচ্ছ কম্পিউটার, মোবাইল, হিয়ারিং ইকুপমেন্টস, পেনড্রাইভ, অসংখ্য ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ও প্যান কার্ড।
ডানকুনির চাকুন্দির আমার বাংলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের একটি গোডাউনে শুক্রবার অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেফতার করে চন্দননগর পুলিশের গোয়েন্দারা। অভিযুক্তরা "ম্যাক্সটেকনো" নামে একটি কোম্পানির নামে কল সেন্টারের আড়ালে বিদেশ ও ভারতে প্রতারণার কারবার চালাচ্ছিল। মাস দু'য়েক ধরে গোডাউন ভাড়া নিয়ে এই চক্র চলছিল।
আরও পড়ুন- ছোট্ট সৌরনীল জীবন দিয়ে হুঁশ ফেরাল পুলিশের! একরাতেই ট্রাফিক নিরাপত্তায় বড় বদল
অতর্কিতে হানা দিয়ে এই চক্রে জড়িত ৮ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম সিরিপুরম কামেশ্বর রাও, রাহুল কুমার শা, সিরিপুরম লক্ষ্মী নারায়ণ আচারী, বাপি দাস, সামির হোসেন, এমডি জাভেদ আলম, এমডি ফয়জান আলান ওরফে জন্টি ও এমডি মোস্তাফা। এদের বাড়ি কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা এবং হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদের মূল টার্গেট ছিলেন বিদেশি প্রৌঢ় নাগরিকরা। চন্দননগর কমিশনারেটের তদন্তকারী এক অফিসার জানান, ডানকুনি থেকে বিদেশে অনলাইনে প্রতারণার কারবার চালাত অভিযুক্তরা। ডানকুনিতে ভাড়ায় নেওয়া গোডাউনে রাত আটটা নাগাদ তারা ঢুকত এবং ভোর চারটে পর্যন্ত কাজ করে বেরিয়ে যেত।
আরও পড়ুন- কিলবিল করে ঘুরছে ওটা কী? সিসি ক্যামেরায় ছবি দেখেই তড়িঘড়ি স্কুলে ছুটি
কীভাবে কাজ চলতো?
তদন্তকারীরা জানান, কলকাতা, দিল্লি-সহ দেশের নানা জায়গায় এদের এজেন্টরা ছড়িয়ে রয়েছে। বিদেশি নাগরিকদের ডলার কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে সেখান থেকে প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলা হত। এরকম অসংখ্য ব্যাঙ্ক একাউন্টেরও হদিশ মিলেছে। তবে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কয়েক ঘণ্টার জেরায় যা জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কয়েকশো কোটি টাকার প্রতারণা করেছে এই চক্রটি। বহুজাতিক অনলাইন নামী বিপণি সংস্থার নামে ভুয়ো মেল পাঠিয়ে লোভনীয় অফার দেওয়া হত। সেই ফাঁদে পা দিলেই বিপদ। ভুয়ো লিঙ্কে ক্লিক করলেই মোবাইল ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ডলার হাতিয়ে নিত প্রতারকরা। এই কাজের জন্য Any Desk-এর মতো টিম ভিউয়ার অ্যাপ ব্যাবহার করা হত।
আরও পড়ুন- আবারও প্রবল বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গে? উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া নিয়ে বড়সড় আপডেট
কীভাবে ধরা পড়ল চক্রটি?
ডানকুনি থানার আই সি তাপস সিনহা সূত্র মারফত জানতে পারেন চাকুন্দির ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবে একটি গোডাউন ভাড়া নিয়েছে কয়েকজন যুবক। তাঁরা দিনে আসে না। রাতে গাড়ি নিয়ে ঢোকে তারা। দিনের আলো ফোটার আগেই তারা বেরিয়ে যায়। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তারা কম্পিউটার রিপেয়ারিং-এর কাজ করবে বলে ভাড়া নিয়েছিল গোডাউনটি।
কিন্তু রাতে কেন সেই কাজ? এতেই সন্দেহ বাড়ে আই সি'র। গোপনে খোঁজ খবর নিতে থাকেন তিনি। ওই যুবকদের গতিবিধির উপর নজর রাখা শুরু হয়। শুক্রবার চাকুন্দির ওই গোডাউনে হানা দেয় পুলিশ। প্রতারকদের কাণ্ড-কারখানায় হতবাক দুঁদে পুলিশ কর্তারাও।