Maldah News: মালতিপুরের আমবাগান থেকে অগ্নিদগ্ধ মহিলার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া স্টেশন থেকে এক যুবককে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ।
পরকিয়ার জেরেই ওই মহিলাকে নৃশংসভাবে খুন করে থাকতে পারে বলে অনুমান পুলিশের। শুক্রবার রাত দুটো নাগাদ কলকাতাগামী ডাউন - রাধিকাপুর এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরা থেকেই ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে কাটোয়া থানার পুলিশ।
ধৃতকে মালদা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। এদিকে শনিবার অগ্নিদগ্ধ ওই মহিলার দেহ উদ্ধারের পর চাচোল থানার মালতিপুর এলাকার আমবাগানে তদন্তে পৌঁছায় তিনজনের একটি ফরেন্সিক দল। এদিন ফরেনসিক দলের তদন্তকারী অধিকারিক দীপক রায় জানিয়েছেন, ওই মহিলার দেহের সমস্ত অংশ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। ফলে তদন্ত তো একটু সমস্যা হবেই। তবে পুড়ে যাওয়া কিছু শরীরের অংশ নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে কিনা সেটি নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই বলা সম্ভব।
ওই মহিলার পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ। ৪০ বছর বয়সী ওই মহিলার বাবার বাড়ি চাচোল থানার দক্ষিণ শহর এলাকায় । ১২ বছর আগে ওই মহিলার বিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ এলাকার এক দিন মজুরের সঙ্গে। তার নাবালক দুই ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। দেড় বছর আগে ওই মহিলার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর বাবার বাড়িতে থাকতো ওই মহিলা । মাঝেমধ্যে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যেত সে ।
অভিযুক্ত আবু তাহের ওই মহিলার শ্বশুর বাড়ির পাশাপাশি এলাকায় থাকে। দীর্ঘদিন আগে তাদের মধ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস ধরে বাবার বাড়িতে থাকাকালীন ওই মহিলা অভিযুক্ত আবু তাহেরকে পাত্তা দিচ্ছিল না। এছাড়াও একাধিক যুবকের সঙ্গে ওই মহিলার পরকীয়া সম্পর্ক ছিল বলেও প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। আর সেটা থেকেই হয়তো ধৃত আবু তাহের বদলা নিতেই এই খুনের ঘটনায় ঘটে থাকতে পারে বলেও অনুমান পুলিশের।
তবে ওই মহিলাকে রাতের অন্ধকারে খুন করা হয়েছে। ধর্ষণ করে খুন কিনা সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে কুপিয়ে খুন করার পর খড়ের গাদায় দেহ রেখে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যেখানে ওই মহিলার অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়, তার আশেপাশে একটি ধারালো রক্তমাখা ছুরি, একজোড়া মহিলাদের জুতো এবং একটি ক্যারিব্যাগ উদ্ধার হয়েছিল । সেই ক্যারিব্যাগে মেডিসিন, আধার কার্ড এবং কাটোয়া যাওয়ার ট্রেনের জেনারেল টিকিট উদ্ধার হয়। আর এই আধার কার্ডের সূত্র ধরেই ওই মহিলার বাড়িতে তদন্ত যায় পুলিশ । তারপরে বিভিন্ন তথ্য পুলিশের হাতে উঠে আসে। কাটোয়া টিকিটের সূত্র ধরে শুরু হয় বিভিন্ন স্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখার কাজ।
পুলিশ জানিয়েছে, রতুয়া থানার সামসি স্টেশনে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে জানা গিয়েছে বৃহস্পতিবার আবু তাহের নামে ওই যুবকের সঙ্গে সন্ধ্যায় স্টেশনে ঘোরাফেরা করছিল ওই মহিলা।
এরপর স্টেশন থেকে তারা দুইজনে বেরিয়ে যায়। এরপর রাত বারোটা নাগাদ আবু তাহেরকে একা স্টেশনে দেখা যায়। তখন সে ডাউন রাধিকাপুর ট্রেনের জেনারেল কামড়ায় ওঠে। এতে সন্দেহ আরো বেড়ে যায় পুলিশের। যেহেতু মৃত মহিলার প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ থেকে কাটোয়া যাওয়ার জেনারেল টিকিট উদ্ধার হয়েছিল, তাই কাটোয়া পুলিশকে আগাম জানিয়ে দেওয়া। এরপরে এদিন রাত দুটো নাগাদ ওই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, খুনের মোটিভ দেখে মনে হচ্ছে পরকীয়া জনিত কারণেই এটি ঘটে থাকতে পারে । তবে আবু তাহেরকে আপাতত সন্দেহের বসে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই খুনের ঘটনায় এক বা একাধিক জন যুক্ত রয়েছে কিনা সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।