বিরাট প্রতারণার পর্দাফাঁস। সোশ্যাল মিডিয়ায় টোপ দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতে দুষ্কৃতীরা। ফাঁদে পা দিলেই সর্বশান্ত হতেন সুন্দরবন অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা। অবশেষে তুমুল তৎপরতায় প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডাকেই ধরে ফেলল পুলিশ। ধৃতকে দফায় দফায় জেরায় বাকিদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।
সুন্দরবন অঞ্চলের বাসিন্দাদের অধিকাংশই মৎসজীবি। মাছ, কাঁকড়া ধরতে প্রায়ই তাঁদের সুন্দরবন এলাকার নদীগুলিতে যেতে হয়। রুজির টানে বেরিয়ে প্রায়শই বাঘের হামলার মুখে পড়তে হয় মৎস্যজীবীদের। বাঘের হামলা থেকে বাঁচতে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষজন ভীষণভাবে ঠাকুর-দেবতা মানেন। তাঁদের সেই সরল বিশ্বাস দেখেই প্রতারণার ফাঁদ পাতে একদল দুষ্কৃতী।
সোশ্যাল মিডিয়ায় 'সোনার ঠাকুর' বিক্রির প্রলোভন দেখানো হতো। বিশ্বাস অর্জনে আগেই ঠাকুরের একটি হাত দেওয়া হতো তাঁদের। সেই হাতটি প্রকৃতই ছিল সোনার। ঠাকুরের সোনার সেই হাত দোকানে পরীক্ষা করাতে নিয়ে যেতেন অনেকে। জহুরি সেটিকে সোনা বললে স্বভাবতই তাঁদের বিশ্বাস জন্মাত। সেই সুযোগেই এবার মোটা টাকায় সোনার ঠাকুর বিক্রির প্রলোভন দেখানো হতো।
আরও পড়ুন- ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের আগেই ‘মেগা-আলোচনা’, রাহুল-অভিষেক একান্তে কী কথা?
বিশ্বাস জন্মে যাওয়ায় বহু কষ্টে টাকার জোগাড় করে 'সোনার ঠাকুর' কিনতে রাজি হয়ে যেতেন অনেকে। এভাবেই 'সোনার ঠাকুর' কিনতে নির্দিষ্ট জায়গায় যখন তাঁরা প্রতিমা নেওয়ার জন্য হাজির হতেন তখন তাঁদের সর্বস্ব লুঠ করে পালিয়ে যেত দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের আগে এই ধরণের প্রতারণা চক্রের বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছিল সুন্দরবন এলাকায়। সেই সময়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই চক্রে জড়িত মোট ২৮ জনকে গ্রেফতার করে। তারপর এই প্রতারণা চক্র কিছুদিন বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি ফের তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন। এই বিষয়ে কুলতুলী থানায় একাধিক অভিযোগও দায়ের হয়েছে।
আরও পড়ুন- আরও বাড়বে গরম? নাকি পলকেই বদল আবহাওয়ায়! দক্ষিণবঙ্গে স্বস্তির বৃষ্টি কবে?
এবার এই প্রতারণা চক্রকে ধরতে কুলতুলী থানার আইসি অর্ধেন্দু শেখর দে সরকারের নেতৃত্বে একটি টিম তৈরি করা হয়। কাস্টমার সেজে ঠাকুর কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী বুধবার দুপুরে জামতলা মোড়ে দেখা করার সময় স্থির হয়। আগে থেকেই সিভিল পোশাকে সেখানে মোতায়েন ছিল পুলিশ। হঠাৎ করেই জায়গা পরিবর্তন করে দুষ্কৃতীরা। জালাবেড়িয়া মোড়ে দেখা করার কথা বলা হয়। গ্রাহক সেজে সেখানেও পুলিশ পৌঁছে যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরেই পালানোর চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা।
তবে ধাওয়া করে এক দুষ্কৃতীকে পুলিশ ধরে ফেলে। ধৃতের নাম তালিমুল। ধৃত ব্যক্তিই চক্রের মূল পাণ্ডা বলে জানা গিয়েছে। ধৃতের কাছ থেকে একটি ওয়ান শর্টার, কার্তুজ, দুটি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে একটি বাইক। ধৃতকে জেরা করে চক্রের বাকি দুষ্কৃকীীদের খোঁজ চালানো হচ্ছে।