Advertisment

অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি পুলিশ, হাওড়ার হিংসার 'ছানবিনে' অবাক একগুচ্ছ তথ্য প্রকাশ্যে

রামনবমীর মিছলকে কেন্দ্র করে হাওড়ার শিবপুরে ছড়ায় সাম্প্রদায়িক হিংসা।

author-image
Nilotpal Sil
New Update
Police did not learn from past incidents to prevent Howrah violence

শুক্রবারেও হাওড়ার শিবপুরে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছিল। এক্সপ্রেস ফটো: পার্থ পাল।

অতীতের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়নি পুলিশ। রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে হাওড়ার শিবপুরের সাম্প্রতিক হিংসা চোখে আঙুল দিয়ে সেই তত্ত্বই সামনে এনে দিয়েছে। অনুমতি ছাড়া মিছিল করতে দেওয়া ও তদুপরি অতীতের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার অভিজ্ঞতাকে কার্যত অবজ্ঞা করা হয়েছে। পাথর নিক্ষেপ সত্ত্বেও এলাকায় সুরক্ষায় কড়াকড়ি হয়নি। এমনকী দ্রুত কোনও নিষেধাজ্ঞাও চাপানো হয়নি। শিবপুরে গত বৃহস্পতিবারের সাম্প্রদায়িক হিংসার পিছনে পুলিশের এমনই কিছু 'ব্যর্থতা' সামনে এসেছে।

Advertisment

বৃহস্পতিবারে পর শুক্রবারেও শিবপুরে অশান্তি চলেছে। শুক্রবার দুপুরে শিবপুর থানা সংলগ্ন কাজীপাড়া ও পিএম বস্তি এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাথর ছুঁড়তে দেখা যায় একদল উন্মত্ত জনতাকে। মাঝপথে আটকে পড়ে পুলিশও। ঠিক তার আগের দিন এই এলাকা দিয়েই রামনবমীর দুটি শোভাযাত্রা বের হয়েছিল। একটি ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এবং অন্যটির উদ্যোক্তা ছিল অঞ্জনী পুত্র সেনা। গত বছরেও এই এলাকাতেই এই ধরনের মিছিলের পর সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন গতবারের গন্ডগোল থেকে যে শিক্ষা নেয়নি এবারেও একই হিংসা তারই প্রমাণ দিল।

রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে এই এলাকায বৃহস্পতিবার যে গন্ডগোল হয় তার বেশ কিছু মুহূর্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও-র আকারে ছড়িয়ে দেয় বিজেপি ও তৃণমূল। সেই ভিডিওতেও এটা স্পষ্ট যে রামনবমীর মিছিলের সময় শিবপুরের এই এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েন ছিলেন না।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শিবপুরের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। তিনি রামনবমীর মিছিলে একজন ব্যক্তির পিস্তল হাতে নেওয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ দেখিয়েছিলেন। এরই পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীও দুটি ভিডিওর দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন। একটিতে দেখা গিয়েছে মিছিল লক্ষ্য করে রাস্তার পাশের ছাদ থেকে পাথর ছোড়া হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে আগুন লাগাতেও দেখা যাচ্ছে একজনকে। দুটি ভিডিওই তিনি হাওড়া পুলিশ প্রধানের কাছে জমা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন- একধাক্কায় অনেকটাই কমল গ্যাসের দাম, নতুন আর্থিক বছরের শুরুতেই স্বস্তি!

তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, পুলিশ দুটি সংগঠনের কাউকেই মিছিলের অনুমতি দেয়নি। তবে দুই সংগঠন মিছিল শুরুর পর তাদের বাধাও দেওয়া হয়নি বলে তাঁর দাবি। এদিকে, শিবপুরের এই ঘটনার সরেজমিনে 'ছানবিনে' নামে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। জানা যায়, হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার মিছিলের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নথি চেয়ে ভিএইচপির ইন্দ্র দেও দুবে এবং অঞ্জনী পুত্র সেনার সুরেন্দ্র ভার্মাকে আলাদা করে চিঠি লিখেছিলেন। আয়োজকদের দাবি, তাঁরা নথি জমাও দিয়েছেন। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মিছিল হবে বলেও তাঁরা নাকি পুলিশকে জানিয়েছিলেন।

এদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে তাঁদের তরফে অস্ত্র বহন, মোটরসাইকেল এবং ডিজে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যদিও পুলিশের সেই শর্ত মানা হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। রামনবমীর মিছিলের দিন কাজীপাড়া এবং পিএম বস্তির কাছে মিছিলের দুই প্রান্তে গার্ডরেল ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে সেখানে এর চেয়ে বেশি নিরাপত্তার বন্দোবস্ত ছিল না। মিছিলের দিন ঠিক কেমন নিরাপত্তার বন্দোবস্ত ছিল ওই এলাকায়? এব্যাপারে একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার বলেন, "পাঁচজন আইপিএস অফিসার সহ মিছিলের সঙ্গে একশো জনেরও বেশি পুলিশকর্মী ছিলেন।"

আরও পড়ুন- আজ থেকে কলকাতা শহরে বাড়ল পার্কিং ফি, কোন গাড়িতে কত খরচ?

বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়ালেও সেই সময় মিছিলের সঙ্গে থাকা বহু পুলিশকর্মীই কার্যত নিরস্ত্র ছিলেন। এমনকী অনেক পুলিশকর্মীকে গন্ডগোলের সময়ে নির্দিষ্ট সুরক্ষাবর্মের বদলে প্লাস্টিকের দুধের ক্রেট দিয়ে আত্মরক্ষা করতে দেখা গিয়েছে। রামনবমীর মিছিল ঘিরে সংঘর্ষে উন্মত্ত জনতার অন্যতম টার্গেট ছিলেন পুলিশকর্মীরাও। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়েছে। সরকারি সম্পত্তিরও ক্ষতি করেছে দাঙ্গাবাজরা।

হাওড়ার শিবপুরে এই বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে কয়েকজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল তিনটে পর্যন্ত কোনও নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ জারি করা হয়নি এবং ইন্টারনেটও বন্ধ করা হয়নি। মিছিলের দিন রাস্তার আশেপাশের বাড়ির ছাদ থেকে গন্ডগোলের ভিডিও করা হয়েছিল। মুহূর্তে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার জেরেই হিংসা আরও বেড়ে গিয়েছিল বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। শিবপুর থানার পদস্থ এক পুলিশকর্তা বলেন, “গত বছরেও পাথর ছোঁড়া হয়েছিল। গাড়িতে আগুনও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আধ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছিল। তবে এবছর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল।”

Violence Howrah West Bengal Ramnavami
Advertisment