Khandaghosh News: ভারতে অংশীদারি ব্যবসায়িক চুক্তিপত্র হয় ২ হাজার টাকার 'নন-জুডিশিয়াল' স্ট্যাম্প পেপারে। আর ব্যবসার মূলধন যদি ৫০ হাজার টাকার নিচে হয় তাহলে ১ হাজার টাকার স্ট্যাম্প পেপারে করতে হয় চুক্তিপত্র। তবে পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) খণ্ডঘোষের এক দম্পতি ১০০ টাকা মূল্যের 'নন-জুডিশিয়াল' স্ট্যাম্প পেপারে যে চুক্তিপত্র করেছেন তা কার্যত চমকে দেওয়ার মতোই। ওই দম্পতি ১০০ টাকা মূল্যের 'নন-জুডিশিয়াল' স্ট্যাম্প পেপারে লেখালেখি করেই সরে ফেলেছেন নিজের শিশু সন্তানের 'দত্তকনামা' পত্র।
বিষয়টি এমন, যেন তাঁদের কাছে মানব শিশুর 'মূল্য' একেবারেই নগণ্য! তবে এমন নজিরবিহীন দত্তকনামা পত্র প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে জেলা প্রশাসনিক মহলে। জেলার সমাজ কল্যাণ দফতরের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই দম্পতির বিরুদ্ধে FIR রুজু করেছে। তাতে বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমেরও নাম জড়িয়েছে।
খণ্ডঘোষের শাঁকারি গ্রামের ওই দম্পতির ভাইপোর অভিযোগ, “বছর বছর একের পর এক সন্তানের জন্ম দিয়েই চলেছেন তাঁর কাকা ও কাকিমা। তাঁদের জন্ম দেওয়া সন্তানের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ১২-তে ঠেকেছে।" খণ্ডঘোষের বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেছেন ওই ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, দত্তক দেওয়ার নামে দম্পতি তাঁদের চারটি সন্তান 'বিক্রি' করে দিয়েছেন, বাকি ৮ টি সন্তানকেও বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের, এমনই অভিযোগ ওই ব্যক্তির।
এদিকে এমন অভিযোগ পেয়ে কার্যত চোখ কপালে ওঠার অবস্থা খণ্ডঘোষের BDO অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
। তিনি নিজে এরপর বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন। এরই পাশাপাশি শিশু সুরক্ষা দফতরও এহেন অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে নেমেছে।
খণ্ডঘোষের BDO অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “নন-ডুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে লিখে শিশু দত্তক দেওয়া যায় না। পুলিশ তদন্ত করছে। ওই শিশুর মায়ের বন্ধ্যাত্বকরণ করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে। সঠিক আইনি পদ্ধতি মেনে দত্তক দেওয়ার জন্য চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (CWC)-কে বলা হয়েছে।" একইভাবে জেলার শিশু সুরক্ষা দফতরের আধিকারিক সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “বেআইনিভাবে শিশু দত্তক দেওয়া হয়েছে। শিশুটিকে সিডব্লুসি’র কাছে পেশ করার জন্যে বলা হয়েছে।"
আরও পড়ুন- Koi Fish: বৃষ্টিতে কই মাছ ধরাই হল কাল, যুবকের চরম পরিণতিতে আঁতকে উঠবেন
আইনজ্ঞদের কথা অনুযায়ী, ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে লেখালেখি করে যে দম্পতি তাঁদের সন্তান অন্যকে দত্তক দিয়েছেন, তাঁরা গর্হিত অপরাধ করেছেন। আর যিনি বৈধ নিয়ম না মেনে শুধুমাত্র নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে লেখা শর্ত মেনে অন্যের সন্তান দত্তক নিয়েছেন তিনিও অপরাধযোগ্য কাজ করেছেন বলে মনে করেন তাঁরা।
এদিকে, শিশুর মায়ের দাবি, তাঁর ১০টি বাচ্চা। তার মধ্যে দুটি মারা যায়। সংসারে অভাব অনটনের জন্যে তিনি দুটি বাচ্চা অন্যকে মানুষ করতে দিয়েছেন। সন্তান বিক্রি বা দত্তকনামা পত্রের প্রসঙ্গ সুকৌশলে তিনি এড়িয়ে যান। তবে দম্পতি দত্তকনামা পত্রের বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও ১০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে ব্যবহার করে হওয়া একটি দত্তকনামা পত্র প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সেই দত্তকনামা পত্র অনুযায়ী ১৩ জুলাই ভূমিষ্ঠ হওয়া একটি শিশু কন্যাকে ৯ দিন পরেই পশ্চিম মেদিনীপুরের এক নিঃসন্তান দম্পতিকে শাঁকারির দম্পতি যে দত্তক দিয়েছিলেন, সেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- Digha: ভরা বর্ষায় দিঘা যেন আরও রঙিন! এরই মধ্যে পর্যটকদের জন্য নয়া ঘোষণা
বর্ধমান দক্ষিণের SDPO অভিষেক মণ্ডল জানিয়েছেন, "অবৈধ উপায়ে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু কন্যাকে অন্যকে হস্তান্তরের দায়ে সমাজ কল্যান দফতর খণ্ডঘোষ থানায় অভিযোগ দায়ের করে । তার ভিত্তিতে খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ ওই শিশু কন্যা মা ও বাবার বিরুদ্ধে FIR রুজু করেছে। তাতে বর্ধমানের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমের নামও জড়িয়েছে।"