শনিবার সকাল ১১টা ২০। কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোড তখন নিত্যযাত্রী আর যানবাহনের ভিড়ে ব্যস্ত। এই ব্যস্ত রাস্তাতেই রাজা কাটরার কাছে টহল দিচ্ছিলেন হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ডের ওসি ইনস্পেক্টর শৌভিক চক্রবর্তী। আচমকা তাঁর নজরে পড়ে, এক কিশোরী স্কুল ইউনিফর্ম পরে কাঁদছে। তাঁকে কিছু একটা বলছে।
কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করে শৌভিক জানতে পারেন, ওই কিশোরী এবছর মাধ্যমিক দিচ্ছে। সিট পড়েছে শ্যামবাজারের আদর্শ শিক্ষা নিকেতনে। নেতাজি সুভাষ রোডের বাসিন্দা ওই কিশোরী একাই পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। কারণ, বাড়ির সবাই দাদুর শেষকৃত্য সারতে গেছেন।একাই সব সামলে বাড়ি থেকে বেরোতে ওই কিশোরীর তাই বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ঠিক সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনো তার পক্ষে অসম্ভব। তাই কাঁদতে কাঁদতে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছে সাহায্যের আশায়।
ব্যাপারটা বুঝে নেওয়ার পরই আর এক মিনিটও সময় নষ্ট করেননি শৌভিক। তাঁর পুলিশের গাড়িতেই তুলে নেন ওই কিশোরীকে। ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে খবর দিয়ে দেন। তৈরি করিয়ে নেন ‘গ্রিন করিডর’। রাস্তায় কোথাও না-থেমে ঝড়ের গতিতে তাঁর গাড়ি পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেয় ওই কিশোরীকে। ঠিক কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে এগারোটায়। তখন সবে দরজা খুলছে স্কুলের। ঘটনায় অভিভূত, ওই পরীক্ষার্থীর চোখমুখ থেকে তখন কৃতজ্ঞতা ঝরে পড়ছিল। তাঁকে ‘বেস্ট অফ লাক’ জানিয়ে ফের অন্য ডিউটিতে বেরিয়ে পড়েন শৌভিক। কেমন লাগল এভাবে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে সাহায্য করে? প্রশ্নের উত্তরে সংবাদমাধ্যমকে শৌভিক বলেন, 'আমরা পুলিশে চাকরি করি। এটা আমাদের কর্তব্য। এই সব করতে আমাদের ভালো লাগে। আমি গর্বিত।'
আরও পড়ুন- কলকাতার এই প্রবীণ সংগ্রহ করেন উনিশ শতকের অমূল্য সব ‘সুচ-সুতোর’ ভালোবাসা
শনিবারের এই ঘটনা জানতে পারার পর কলকাতা পুলিশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শহরের নাগরিক থেকে নেটিজেনরা। ইনস্পেক্টর শৌভিকের এই ঘটনা কিন্তু বিরল নয়। এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিন থেকেই এভাবে পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারেন। পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারেন, তার জন্য কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনই শহরের বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন খোদ নগরপাল বিনীত গোয়েল। পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অনুরোধ করেন, যাতায়াতের পথে কোনও সমস্যায় পড়লে ১০০ নম্বর ডায়াল করতে। ভরসা জুগিয়ে জানিয়ে দেন, তাঁরা সবসময় পরীক্ষার্থীদের পাশে আছেন।