অভাবের সংসার। বহু কষ্টে ধার-দেনা করে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অন্যের জমিতে চাষ করেই দিন গুজরাণ হতো অভাবী কৃষক ভাস্কর মাজির। তবে সেসব দিন আজ এক ঝটকায় যেন সূদূর অতীত! রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গিয়েছেন নিতান্ত সাদামাটা জীবনজাপন করা এই প্রৌঢ়। তাঁর এই কোটিপতি হওয়ার গল্প এখন পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের লোকের মুখে-মুখে ফিরছে। প্রতিবেশীদের উপচে পড়া ভিড় ভাস্কর মাজির বাড়িতে। কীভাবে হল এই অসাধ্য সাধন? জানলে অবাক হতেই হয়।
কীভাবে রাতারাতি কোটিপতি হতদরিদ্র্য কৃষক?
পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের খুর্ত্তুবাপুর গ্রামের বাসিন্দা ভাস্কর মাজি। অন্যের জমিতে চাষ করে এবং ছাগল পুষেই চলে সংসার। মাঝেমধ্যেই তিনি লটারির টিকিট কাটতেন। এবার এই লটারিই খুলে দিয়েছে তাঁর ভাগ্য! লটারিতে প্রথম পুরস্কারের কোটি টাকা জিতে নিয়েছেন তিনি। লটারিতে ভাগ্য ফেরাতে টানা ১০ বছর ধরে টিকিট কাটছেন এই ব্যক্তি। তাঁর এই লটারির টিকিট কাটা নিয়ে বাড়িতে অশান্তিও কম হয়নি। তবে আজ সেসব অতীত। পরিবারে এখন শুধুই খুশির হাওয়া।
লটারিতে কোটি টাকার পুরস্কার জিতে আনন্দে আত্মহারা কৃষক ভাস্কর মাজি। তিনি বলেন, "ছাগলের জন্য ঘাস কাটতে বেরিয়েছিলাম। আমি শখে-দুঃখে টিকিট কাটি। ঘাস কাটতে যাই প্রতিদিন। ঘাস কাটার আগে প্রতিদিন চা খেতে যাই। মনে হলে টিকিট কাটি আবার কোনওদিন কাটিও না। আমার কাছে পয়সা ছিল না। ধারে টিকিট কেটেছিলাম। তাতেই এই পুরস্কার। এই টাকায় ছেলের জন্য ঘর-বাড়ি করব। কিছু জমি কেনারও ইচ্ছা আছে।"
এতদিন লটারির টিকিট কাটা নিয়ে অশান্তি করতেন স্ত্রী, আজ স্বামীর সেই লটারিতেই কোটিপতি হওয়ার খবরে তিনি কী বলছেন?
ভাস্কর মাজির এই কোটি টাকার পুরস্কার জেতার খবরে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও উচ্ছ্বাস-আনন্দের স্রোতে ভাসছেন। থাকার মতো যাঁদের একটা ভালো ঘরও নেই, তাঁদের বাড়ির সদস্যই লটারিতে জিতেছেন কোটি টাকার পুরস্কার। এতেই আত্মহারা পরিবারের সদস্যরা। যে স্ত্রী এতদিন ভাস্কর মাজির লটারির টিকিট কাটা নিয়ে অশান্তি করতেন তিনিও আজ বেজায় খুশি। ভাস্কর মাজির স্ত্রী সুমিত্রা মাজি বললেন, "আমাদের খুব কষ্টের সংসার। পুজোর আগেই এত বড় খুশির খবর। এতদিনে ঠাকুর মুখ তুলে চেয়েছেন।"
আদরের দুই পোষ্য ও পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে ভাস্কর মাজি।
ভাস্কর মাজির দুই মেয়ে মেয়ে নয়ন ও কল্পনা মাজিরা জানান, তাঁদের বাবা বহু কষ্টে তাঁদের বিএ পাশ করিয়েছেন। ধার-দেনা করে দুই বোনের বিয়েও দিয়েছেন। এরই পাশাপাশি ছেলের কোটিপতি হওয়ার গল্পে যারপরনাই খুশি ভাস্কর মাজির বৃদ্ধা মাও। তাঁর কথায়, "আমার ওই একটাই ছেলে। লটারিতে জেতা টাকায় ওর যা ইচ্ছে হয় তাই করবে।"