আমফানের জের: নোনা জলে ধান চাষের পরিকল্পনা, টিউবওয়েলের জন্য বরাদ্দ ১০০ কোটি

আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে যাতে আরও বেশি ১০০ দিনের কাজ করানো যায়, সেই বিষয়েও জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি সংশ্লিষ্ট বিডিও-দের নির্দেশ দেন যাতে এই কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান স্থানীয় মানুষ

আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে যাতে আরও বেশি ১০০ দিনের কাজ করানো যায়, সেই বিষয়েও জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি সংশ্লিষ্ট বিডিও-দের নির্দেশ দেন যাতে এই কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান স্থানীয় মানুষ

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
১ জুলাই ছুটি ঘোষণা মমতার-ভাড়া না বাড়লে পথে নামবে না বাস-‘কোভিড-ওয়ারিয়র্স ক্লাব’ তৈরি বাংলায়-উর্দি পোড়ালেন জোম্যাটো কর্মীরা

নবান্ন সভাঘরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফাইল ছবি

আমফানের দাপটে নোনা জল ঢুকে পড়েছে সুন্দরবন অঞ্চলের বহু কৃষিজমি এবং পুকুরে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসল, ব্যাপক হারে মৃত্যু হয়েছে মাছের। এই আবহেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার ঘোষণা করলেন, নোনা জলে ধান এবং মাছ চাষ করার উদ্দেশ্যে বিশেষ পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য। এদিন নবান্নে আমফান-পরবর্তী পরিস্থিতির পর্যালোচনা করতে প্রশাসনিক বৈঠকে এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisment

'নোনা স্বর্ণ' নামের একটি বিশেষ প্রজাতির ধানের ওপর গবেষণা চলছে গোসাবার গবেষণা কেন্দ্রে, যার পেটেন্ট-এর জন্য আবেদন জানাবে রাজ্য, বলেন মমতা। এছাড়াও নোনা জলে মাছ চাষের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে রাজ্য সরকার, একথাও জানান তিনি। একইসঙ্গে ওই অঞ্চলের অসংখ্য ক্ষতিগ্রস্ত টিউবওয়েল মেরামতির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলেও ঘোষণা করেন মমতা।

আগামী ৬ থেকে ৯ জুন পূর্ণিমার ভরা কোটাল। তার আগে অন্তত সুন্দরবন অঞ্চলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় যাতে নদীবাঁধ মেরামতির কাজ সেরে ফেলা যায়, সেই মর্মে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমফানের দাপটে সুন্দরবন অঞ্চলে ১৬০ কিমি নদীবাঁধের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি একথাও জানান যে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় এবং সংশ্লিষ্ট কারণে মৃত এবং আহতদের যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল সরকার, তা ছাড়াও "সামান্য জখমদের" মাথাপিছু ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

Advertisment

আরও পড়ুন: রাজ্যকে না জানিয়েই আসছে শ্রমিক স্পেশাল, মোদীর হস্তক্ষেপ চাইলেন মমতা

আমফানের জেরে যেহেতু সুন্দরবন অঞ্চলই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত, সেহেতু সেখানকার ১০ লক্ষ বাড়ির মেরামতির জন্য বাড়ি পিছু ২০ হাজার টাকা অনুদানের কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী, "যাতে অন্তত বাড়ির ছাদটুকু মেরামত করা যায়"। এই টাকা অবিলম্বে ছাড়ার নির্দেশ দেন তিনি। সেইসঙ্গে বলেন, "ডিএম-দের বলব, কোনও মানুষ যেন অভুক্ত না থাকেন, তার জন্য প্রয়োজনে ভিক্ষে করব। তবে বাচ্চাদের খাবার, শুকনো খাবার, জামাকাপড়, মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে," বলেন তিনি।

আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে যাতে আরও বেশি ১০০ দিনের কাজ করানো যায়, সেই বিষয়েও জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি সংশ্লিষ্ট বিডিও-দের নির্দেশ দেন যাতে এই কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান স্থানীয় মানুষ, এবং তারপর ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকরা।

রাজ্য সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় আমফান বিদায় নেওয়ার এক সপ্তাহ পরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এরকম:

# ক্ষতিগ্রস্ত ৬ কোটি, মৃত ৮৭

# ঝড়ের আগে নিরাপদ স্থানে সরানো হয় ৮.১৩ লক্ষ মানুষকে, যাঁদের মধ্যে আন্দাজ ২ লক্ষ এখনও আশ্রয় শিবিরেই রয়েছেন

# প্রায় ৪.৫ লক্ষ ইলেকট্রিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত

# ১০.৫ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমি, এবং ৫৮ হাজার হেক্টর জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত

# ১ লক্ষের বেশি পানের বরজ নষ্ট

# শহরাঞ্চলে ৩১৭ কিমি, এবং গ্রামাঞ্চলে ৪,৪১০ কিমি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত, যার মধ্যে সুন্দরবন অঞ্চলেই রয়েছে ৭০০ কিমি। স্রেফ এই অঞ্চলের রাস্তা মেরামত করতেই বরাদ্দ করা হয়েছে সুন্দরবন দফতরের গোটা বাজেট

# ১ লক্ষ ১০ হাজার স্কুলবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। এর অনেকগুলিই ব্যবহৃত হচ্ছিল পরিযায়ীদের কোয়ারান্টিন কেন্দ্র হিসেবে

# দু'হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, এবং তিনটি জেলা হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত

# ৮,০৬০ টি নৌকো নষ্ট, যার ফলে মৎস্যজীবীদের জীবিকায় টান পড়বে

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন