পঞ্চায়েত ভোটে খারাপ ফল হতেই বিজেপির দ্বন্দ্ব প্রকট আকার নিয়েছে পূর্ব বর্ধমানে, এমনই দাবি রাজনৈতিক মহলের। জেলা বিজেপি সভাপতি ও সাংসদ আলুওয়ালিয়া জুটি হঠাও পোস্টার বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায়। যা নিয়ে তুমুল টিপ্পনি ছুঁড়ে দিয়েছে শাসকদল তৃণমূল।
পঞ্চায়েত ভোটে এবার পূর্ব বর্ধমানে খারাপ ফল হয়েছে বিজেপির। এর আগেও অভিযোগ ওঠে বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ আলুওয়ালিকে এলাকায় দেখাই যায় না। শুধু তাই নয়, পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ তা-এর বিরুদ্ধেও কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ রয়েছে। যদিও প্রকাশ্যে এব্যাপারে জেলা বিজেপির কোনও নেতা-কর্মী মুখ খোলেননি। তবে ইতিমধ্যেই ওই পোস্টার নিয়ে চর্চা বাড়ছে।
বর্ধমান শহরের একাধিক এলাকায় লাগানো পোস্টারে লেখা রয়েছে, 'জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা ও সাংসদ সুরেন্দ্রজিৎ সিং আলুওয়ালিয়া জুটি হঠাও, পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপি বাঁচাও।' বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্রজিৎ সিং আলুওয়ালিয়াকে নিয়ে এটাই প্রথম পোস্টার নয়। এর আগেও সাংসদ 'নিখোঁজ' বলে পোস্টার পড়েছিল। তবে পোস্টার-কাণ্ড নিয়ে বিজেপি ও শাসকদলের তর্জায় ভাঁটা পড়েনি।
আরও পড়ুন- ভোটের বাংলায় থামছেই না মৃত্যু মিছিল, ফের মৃত্যু এক তৃণমূলকর্মীর
বর্ধমান শহরের কার্জন গেট, জেলা প্রশাসনিক দফতর চত্বর, আলিশা, উল্লাস, বীরহাটা-সহ প্রভৃতি এলাকায় এই পোস্টার সবার নজরে আসে। বিজেপির প্রতীক পদ্মফুল এবং ভারত মাতা কি জয়' লেখা পোস্টারের একপাশে জেলা বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ তা এবং অন্য পাশে সাংসদ সুরেন্দ্রজিৎ সিং আলুওয়ালিয়ার ছবি। এর নিচেই বড়-বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে, জেলা সভাপতি ও সাংসদ জুটিকে সরিয়ে বিজেপিকে 'বাঁচানো'-র কথা। পঞ্চায়েত ভোটের ফলের নিরিখে এরাজ্যে এই মুহূর্তে তৃণমূলের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি।
আরও পড়ুন- তুমুল বৃষ্টিতে ধুয়ে যাবে জেলার পর জেলা! আজই তুফানি বদল আবহাওয়ায়!
তবে অন্য জেলার চেয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিজেপির ফল বেশ খারাপ হয়েছে। সেই খারাপ ফলের জন্য দলের জেলা সভাপতি ও সাংসদকেই দায়ী করছেন অনেকে। এই পোস্টারও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে থেকেও কেউ লাগিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
নির্বাচনের কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিজেপি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪০১০টি আসনের মধ্যে ১৮৩৯টিতে প্রার্থী দিয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র ১৯৮টি আসনে জিতেছে তারা। পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপি জয় পেয়েছে ১২টি আসনে। এই পরিসংখ্যানের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির জেলা মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটে লুঠ হয়েছে । তবুও জেলায় বিজেপিকে আটকানো যায়নি। আমাদের সংগঠন পূর্ব বর্ধমান জেলার পাশাপাশি গোটা রাজ্যেই বাড়ছে। সেটা বুঝে গিয়ে তৃণমূল রাতের অন্ধকারে পোস্টার লাগিয়ে বিজেপির বদনাম করতে চাইছে।"
আরও পড়ুন- ‘জিতলেই টাকা, তাই এত মারামারি-ভাঙচুর!’ পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পর্কে নজিরবিহীন মন্তব্য বিচারপতির
যদিও এই অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়ে রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “ওই পোস্টারেই প্রকাশ পেয়েছে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আগেও বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বে পোস্টারে পড়েছিল শহর বর্ধমানের নানা জায়গায়। পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলে সারা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও শুধুমাত্র পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিজেপি তৃতীয় স্থানে রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিপিএম। এর জন্যই ওই দলের নিচু স্তরের কর্মীরা হয়তো পোস্টারের মাধ্যমে দলের জেলা নেতৃত্ব ও সাংসদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।''