মাটির হাঁড়ি, কড়াই কিংবা নানান সামগ্রী – এসবের খোঁজ মিললেও ক্রমশই অচলের খাতায় নাম লিখিয়েছে। বরং স্টিল, কাঁচ কিংবা চীনামাটির শিল্পেই ঘরে ভরিয়েছেন শহর থেকে মফসসলের মানুষরা। গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে খুঁজলে তাও দু-একটি বাড়িতে কিংবা দোকানে দেখা গেলেও এর ব্যবহার আর সেইভাবে নেই। যদিও গরমের দিনে জালা কিংবা কুঁজো অনেকেই ব্যবহার করেন। তার সঙ্গে মাটির ভাঁড় কিংবা অন্যান্য কিছু তো রয়েছেই, তবে চাকা ঘুরলেও কুমোরের ব্যবসায় কিন্তু এখন অনেকটা ভাটা পড়েছে।
রাজেন পণ্ডিত (মৃৎশিল্পী) এই পেশার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৩০-৩৫ বছর। বললেন, “এখন আর সেভাবে এই ব্যবসা চলে না। বিক্রি প্রায় নেই বললেই চলে। আগের সময়ে রমরমা ছিল, অনেক মানুষই মাটির পাত্রে রান্না করতেন, কারণ স্বাদও ভাল হত আবার স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভাল ছিল। আগে যারা বাসনপত্র বানাতেন তারা এখন পেট চালাতেই ভাঁড়, কিংবা লক্ষ্মীর ঘট অথবা মাটির বোতল বানান। তার গায়ে কারুকার্য করেন। তবে বেশি নয়, ওই দু চারটে, খুব বেশি হলে দশটা মত বিক্রি হয়। অনেক মিষ্টির দোকানের লোকেরা এসে দই-এর ভাঁড় কিংবা হাঁড়ির অর্ডার দিয়ে যান তাও কিছুটা বিক্রি হয়।”

সারাবছরই এইসব জিনিস নাকি অন্য কিছুও থাকে? উত্তরে রাজেন বাবু বলেন, “না বানাই তো! দীপাবলি উপলক্ষ্যে অনেকেই তুবড়ির বাইরের খোলা কিংবা প্রদীপ এগুলো কিনতে আসেন, তারা আমার এখান থেকেই নিয়ে যান। সেই সময় অন্য জিনিস বানাই। অনেকেই আছে হয়তো বিশেষ কোনও অনুষ্ঠান উপলক্ষে মাটির থালার অর্ডার দেন, সেগুলোও বানানো হয়। নির্দিষ্ট কোনও অনুষ্ঠান হলে বিক্রি বাট্টা হয়, নাহলে একদমই খালি”।
মাটির কেমন দাম যাচ্ছে এখন? “ডায়মন্ড হারবার থেকেই মাটি কিনতে হয়। আর আশেপাশের গঙ্গা মাটি কিংবা অল্প বালি মেশানো হয়। মাটির দাম যেন আকাশছোঁয়া! রাজেন বাবু বললেন, দাম ধরুন কেউ নেয় ২০০০ টাকা, কিংবা ৪০০০ টাকা। মাটির দামটা খুব বেশি, এবার সেই মাটি নিয়ে এলেও জিনিস বানিয়ে রাখলেও বিক্রি হয় না। আগে, কলকাতার দিকে অনেক যেত এইসব সামগ্রী, এখন সেটাও অনেকটা কমেছে”।

শহর থেকে মফসসল- মাটির পাত্রের চাহিদা এখন তলানীতে। অনেকেই আছেন যারা উৎসব আনন্দে মাটির থালা গ্লাস ব্যবহার করেন, তবে সেটি সাময়িক কিংবা অনুষ্ঠান সাপেক্ষে। বাস্তবে অথবা প্রতিদিনের জীবনে এর ব্যবহার এখন আর নেই, তাই ভাঁটা পড়েছে মৃৎশিল্পীদের কাজেও।