Advertisment

হাঁটার শক্তি নেই, হাত-গাড়িতেই গ্রাম ঘুরে বিনে পয়সায় মাস্টারি

কুড়ি বছর ধরে গ্রামের সরকারি স্কুলে বিনা বেতনে পড়িয়ে চলেছেন মাস্টারমশাই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Prabir paul a resident of goghat teach students in free of cost

শিক্ষক দিবসে গুরুপ্রণাম। ছবি: উত্তম দত্ত

গোঘাটের প্রবীর পাল। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় উড়িয়ে কচিকাঁচাদের নিয়েই দিব্যি আছেন মাস্টারমশাই। গ্রামের স্কুলে বিনা বেতনের 'চাকরি'। পড়ানোর ফাঁকে স্কুলের বাগান পরিচর্যাতেও সমান নজর তাঁর। দীর্ঘদিন ধরে এটাই রুটিন বছর পঁয়তাল্লিশের প্রবীর পালের। করোনাকালে বন্ধ স্কুল। তাতে কী? খুদেদের নিজের বাড়িতে ডেকেই পড়ান তিনি। কখনও বা তাদের বাড়িতে গিয়েও পড়িয়ে আসেন মাস্টারমশাই। শিক্ষক দিবসে আদরের মাস্টারমশাইকে শ্রদ্ধা খুদে পড়ুয়াদের।

Advertisment

হুগলির গোঘাটের চাতরা গ্রামে প্রবীর স্যারকে এক ডাকে সবাই চেনেন। গ্রামের কচিকাঁচাদের খুব কাছের এই মানুষটি। অভিভাবকরাও শ্রদ্ধার নজরে দেখেন প্রৌঢ়কে। চাতরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ান প্রবীর পাল। তবে তিনি সরকারি চাকুরে নন। চাকরির জন্য কোওদিন চেষ্টাও করেছিলেন কিনা জানা নেই। স্কুলের অন্য মাস্টারমাশাইদের সঙ্গে তিনিও সমাজ গড়ার ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

publive-image

স্কুলে বিনা বেতনেই ছাত্র পড়ান প্রবীর মাস্টার। শুধু পড়ানোই নয়। মিড ডে মিলে বাচ্চাদের খাবারের বাসনও মাজতে দেখা যায় তাঁকে। স্কুলের বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা তাঁরই হাতে। সবটাই করেন মনের আনন্দে। কচিকাঁচাদের ভালোবেসে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাঁর। জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই পক্ষাঘাতে নিম্নাঙ্গ অসাড় হয়। চলাফেরা করায় ঘোর সমস্যা। তাতে কী? তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।

ছোট থেকেই শিক্ষকতা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল প্রবীর পালের। শারীরিক সমস্যার জেরে সরকারিভাবে শিক্ষকের মর্যাদা জোটেনি। তবে নিজের গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে তিনি কুড়ি বছর ধরে পড়িয়ে চলেছেন। স্কুলে বিনা বেতনেই ছাত্রছাত্রীদের পড়ান প্রবীর মাস্টার। স্কুলের অন্য শিক্ষক থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক সবাই প্রবীর স্যারকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন।

publive-image
প্রবীর পালের বাড়িতে শিক্ষক দিবসের ছোট্ট অনুষ্ঠানে খুদে পড়ুযারা

আরও পড়ুন- ‘ভবানীপুরে খেলা হবে’! উপনির্বাচন ঘোষণা হতেই মমতার পাড়া ঢাকল ফ্লেক্স-দেওয়াল লিখনে

কীভাবে সংসার চলে তাঁর? বিয়ে করেননি। সরকারি প্রতিবন্ধী-ভাতা হিসেবে কিছু টাকা মেলে। এছাড়াও পারিবারিক কিছু জমিতে হওয়া ফসল বিক্রির টাকায় চলে সংসার। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকেন প্রবীর পাল। ফি বার শিক্ষক দিবসে মাস্টারমাশাইয়ের বাড়িতে ভিড় জমে যায় এতল্লাটের কচিকাঁচাদের। এবারও তার অন্যথা হয়নি। খুদে পড়ুয়ারা শিক্ষক দিবসে ফুলের মালা নিয়ে হাজির মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে। পণ্ডিত রাধাকৃষ্ণনের ছবিতে মালা দিয়ে ছোট্ট একটি অনুষ্ঠানও হল প্রবীর পালের বাড়িতে। আদরের স্যারকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় ভরিয়ে দিল খুদে পড়ুয়ারা। কচিকাঁচাদের এমন শ্রদ্ধায় আবেগে ভাসলেন প্রবীর মাস্টার।

ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Hooghly Goghat Teachers Day
Advertisment