উদ্দেশ্য মহৎ। সেই উদ্দেশ্যকে সার্থক করতে লড়াইটা কিন্তু বেশ কঠিন। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে এই কাজটিই করে চলেছেন পাঁশকুড়ার প্রশান্ত সামন্ত। কারও মৃত্যু সংবাদ শুনলেই ছুটে যান প্রশান্তবাবু। মৃতের আত্মীয়-পরিজনদের মরণোত্তর চক্ষু দানের প্রয়োজনীয়তা বোঝান তিনি। মৃত ব্যক্তির চোখ দিয়ে অন্য একজন দেখবে পৃথিবী। ধ্রুব এই সত্যিটা বুঝিয়েই মরণোত্তর চক্ষু দানে লোকজনকে উৎসাহ দেন তিনি।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার বাসিন্দা প্রশান্ত সামন্ত। পেশায় বিমা কর্মী প্রশান্তবাবু চক্ষুদান আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। বেশ কয়েক বছর ধরে হলদিয়ার চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমের নেত্র নিরাময় নিকেতনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। এই সংগঠনটিই মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে মানুষজনকে বোঝানোর মতো মহান কাজে যুক্ত। প্রশান্তবাবু এই সংঘটনটির সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত।
ইতিমধ্যে মৃত্যুর পর ৫৮ জনের চোখ সংগ্রহ করতে পেরেছেন প্রশান্ত সামন্ত। পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও আশেপাশের জেলাতেও মৃত্যুর খবর পেলেই ছুটে যান তিনি। মৃতের পরিবারের সম্মতি পেলেই হলদিয়ার চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমের নেত্র নিরাময় নিকেতনের চিকিৎসকদের সহ্গে কতা বলেন। পরে তাঁদের নিয়ে গিয়ে চোখ সংগ্রহ করেন তিনি।
গত মঙ্গলবার বাড়ির পাশে একটি দোকানে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়েছিলেন প্রশান্ত সামন্ত। ঠিক তখনই তাঁর কাছে খবর আসে, তমলুকের গড়কিল্লা গ্রামের ৮১ বছরের বৃদ্ধ মধুসূদন মালিকের হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে। সেই খবর শোনা মাত্রই ছুটে যান তিনি। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান অশোক পাইককে সঙ্গে নিয়ে মধুসূদনবাবুর বাড়িতে পৌঁছে যান প্রশান্ত। সদ্য পিতৃহারা দুই ভাই গোপাল মালিক ও গোবিন্দ মালিকের কাছে মরণোত্তর চক্ষুদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
চক্ষুদানের গুরুত্ব বোঝার পর সম্মত হয় বৃদ্ধের গোটা পরিবার। বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম নেত্র নিরাময় নিকেতন আই ব্যাঙ্কের টিম মৃত বৃদ্ধের কর্নিয়া দুটি সংগ্রহ করে। প্রশান্তবাবুর এই সমাজ সেবামূলক কাজে খুশি এলাকার মানুষজন।
আরও পড়ুন- কারখানায় কর্মীদের প্রবেশে বাধা, হলদিয়ায় গ্রেফতার ৪ INTTUC নেতা
পেশায় বিমা কর্মী প্রশান্ত সামন্ত বলেন, ''পেশার কাজে জন্য বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতে হয়। যাতায়াতের সময় মৃত্যু সংবাদ শুনলেই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মরণোত্তর চক্ষু দানের প্রস্তাব দিই। অনেকে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন, অনেকে করেন না। যাঁরা রাজি হন, চিকিৎসকদের সাহায্য নিয়ে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে যাই। এমনই একটি কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আমি বেশ খুশি।''