Advertisment

জল ভেবে কীটনাশক মিশিয়ে মদ্যপান, পরপর মৃত্যু, মঙ্গলবারের ঘটনায় এখনও বাকরুদ্ধ ছোট্ট এই গ্রাম

এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি কয়েকজন। একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

author-image
Nilotpal Sil
New Update
Premature death due to intoxication, this small village cannot forget the events of Tuesday night

মঙ্গলবার রাতে এই পোল্ট্রি ফার্মে বসেই চলছিল মদ্যপান।

নেশার ঘোর ডেকে এনেছে মৃত্যু। মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি বারুইপুরের উত্তর রানাঘাটা গ্রামে। গোটা গ্রামে ইতি-উতি এখনও আলোচনা। মঙ্গলবার রাত থেকেই গ্রামে পুলিশ, সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের আনাগোনা বেড়েছে। এগ্রামে মদ্যপানের জেরে এমন পরপর মৃত্যু এর আগে কবে ঘটেছে তা মনে করতে পারলেন না গ্রামের বয়স্করাও।

Advertisment

মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনা যেন নিমেষে ওলোট-পালোট কের দিয়েছে সব কিছু। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর রানাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা রথীন গায়েন। তাঁর বাড়িতেই বসেছিল কীর্তনের আসর। গ্রামের বহু মানুষের পাশাপাশি রথীনবাবু তাঁর বাড়ির সেই কীর্তনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বন্ধু অশোক মণ্ডলকেও। অশোক পেশায় একজন খাটাল মালিক। তাঁর একটি ছোট মিষ্টির দোকানও রয়েছে। বারুইপুর থানারই মীরপুরের বাসিন্দা অশোক মণ্ডল। বন্ধু রথীনের আমন্ত্রণে দোকানের কয়েকজন কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধেয় গিয়েছিলেন অশোক মণ্ডল।

রথীনের বাড়ির পিছনের দিকে রয়েছে একটি মুরগির পোল্ট্রি। সেখানেই অশোক ওই পোল্ট্রিতে কাজ করা এক যুবক জাহিদ গাজি ও নিজের কয়েকজন কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে মদ্যপান করতে বসে পড়েন। রথীনববাবুর বাড়ি থেকেই জলের বোতল নিয়ে চলে মদ্যপান। তবে জল শেষ হয়ে যাওয়ায় ঘটে যায় বিপত্তি। পাশেই জলের মতো দেখতে বোতল-ভর্তি তরল চোখে পড়ে অশোকদের। সেই তরল মদে মিশিয়ে খাওয়া শুরু করেন তাঁরা।

publive-image
এই জায়গাতেই বসেছিল কীর্তনের আসর।

রথীন গায়েনের বোন বর্ণালী সরকার বলেন, ''হঠাৎ ওরা এসে বলল গলা-বুক জ্বালা করছে। আমরা ছুটে এসে দেখি সবাই মাটিতে শুয়ে পড়ে কাতরাচ্ছে। অনেকে গালের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে বমি করানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ওরা বমি করতেও পারছিল না। তারপর ওদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।'' বারুইপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অশোক মণ্ডল, সাহেব হালদার ও রজত হালদার নামে তিনজনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় গিরিধারী যাদব, মুনিম যাদব ও জাহিদ গাজিকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বুধবার সকালে হাসপাতালে মৃত্যু হয় মুনিম যাদবের।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৃষ্ণমোহন স্টেশনের কাছেই রয়েছে এই উত্তর রানাঘাটা গ্রাম। কৃষিকাজের পাশাপাশি পোল্ট্রি ফার্মের কারবারও রয়েছে এগাঁয়ের অনকের। এছাড়াও গ্রামের একাধিক পরিবারে চাকরিজীবী সদস্যও রয়েছেন। বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা অনুষ্ঠান চলে গ্রামে। তবে সেই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কখনই কোনও অশান্তি বা কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির নজির নেই এই গ্রামে। তবে এবার যা ঘটল তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এমনই বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকার বাসিন্দা প্রণব হালদার জানালেন, রথীন গায়েনের বাড়িতে কীতর্ন চলছিল। এলাকার অনেকেই সেই গান শুনতে গিয়েছিলেন। তারই ফাঁকে ঘটে যায় এই বিপত্তি।

publive-image

তবে মঙ্গলবার রাতে উত্তর রানাঘাটায় মদ্যপান করে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের সবাই যে স্থানীয় তা নয়। মৃত অশোক মণ্ডল বারুইপুর থানারই মীরপুরের বাসিন্দা। মৃত সাহেব হালদার ও রজত হালদার দু'জনেই রায়দিঘির বাসিন্দা। দু'জনেই অশোকের খাটাল ও মিস্টির দোকানে কাজ করতেন। অন্যদিকে, মদ্যপান করে মৃত মুনিম যাদব বিহারের বাসিন্দা। ওই ব্যক্তিও অশোক মণ্ডলের খাটাল দেখাশোনা করতে বলে জানা গিয়েছে।

এঁদের সঙ্গেই মদ্যপান করছিলেন গিরিধারি যাদব। এই ব্যক্তিরও বাড়ি বিহারে। তিনিও অশোক মণ্ডলের কাছেই কাজ করেন। বর্তমানে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি সংকটজনক। ভর্তি রয়েছেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কীটনাশক মেশানো মদ পান করে গুরুতর অসুস্থ জাহিদ গাজিই একমাত্র উত্তর রানাঘাটা এলাকার বাসিন্দা। ওই রাতে জাহিদ নামে ওই যুবকও মদ্যপান করতে গিয়েছিলেন রথীন গায়েনের বাড়িতে।

আরও পড়ুন- বঙ্গোপসাগরে ঘণীভূত হচ্ছে ‘অশনি’, জানুন আবহাওয়ার পূর্বাভাস

রথীন গয়েনের বাড়ির পোল্ট্রিতেই কাজ করেন জাহিদ গাজি। একইসঙ্গে ওই যুবক টেটোও চালান। জাহিদের বাবা হান্নান গাজি জানালেন, ওই রাতে তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছেলে রথীন গায়েনের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর ছেলে মদ্যপান করতে বসে পড়েন কয়েকজনের সঙ্গে। তবে তাঁর ছেলের এই বেহিসেবি জীবন নিয়ে তিনি বরাবর অসন্তুষ্ট ছিলেন। ছেলে জাহিদকে বহুবার মদ্যপান করতে বারণও করেছিলেন তিনি। কিন্তু জাহিদ তাঁর কোনও কথা শোনেন না বলে অভিযোগ বাবার। বর্তমানে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন জাহিদ।

এদিকে, এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বারুইপুর থানার পুলিশ। ইতিমধ্যেই রতীন গায়েনকে আটক করে চলচে জিজ্ঞাসাবাদ। গ্রামেরও বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা। বারুইপুরের পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি জানিয়েছেন, পোলট্রি ফার্মের মালিক রথীন গায়েনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সম্ভবত কীটনাশক জাতীয় তরল পান করেই বিপত্তি ঘটেছে। তবে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Death West Bengal police
Advertisment