বাঁশির সুরে মোহিত হন মা! ভোগে থাকে ইলিশ, সবুজকালীর মাহাত্ম্য সত্যিই চমকপ্রদ!

শারদোৎসব শেষে দীপাবলী আসন্ন। গোটা বাংলা এখন শ্যামা মায়ের আরাধনায় তৈরি।

শারদোৎসব শেষে দীপাবলী আসন্ন। গোটা বাংলা এখন শ্যামা মায়ের আরাধনায় তৈরি।

IE Bangla Web Desk & Nilotpal Sil
New Update
Preparations for Sabuj Kali Puja in full swing at Hooghly Haripal Sripatipur

মা সবুজ কালীর পুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে।

শারদোৎসব শেষে দীপাবলী আসন্ন। গোটা বাংলা এখন শ্যামা মায়ের আরাধনায় তৈরি। দিকে দিকে ধুমধাম করে হবে কালীপুজো। মা কালীর গায়ের রং সাধারণত নিকষ কালো কিংবা শ্যামলা দেখতেই সবাই অভ্যন্ত। কিন্তু এখানকার কালী মাতার গায়ের রং সবুজ! এছাড়াও আর পাঁচটা কালীপুজোর চেয়ে এপুজোয় ফারাক অনেক। শ্যামা মায়ের প্রিয় ফুল জবার বদলে এখানে দেওয়া হয় জুঁই। স্বপ্নাদেশে হয় মূর্তি প্রতিষ্ঠা।

Advertisment

হুগলির হরিপালের শ্রীপতিপুর গ্রাম। এখানেই গত ৭৩ বছর ধরে সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতার মন্দিরে অধিকারী বাড়ির ইতিহাস আঁকড়ে হয়ে আসছে শ্যামা মায়ের আরাধনা। এই গ্রামের অধিকারী পরিবারে দীর্ঘদিন ধরে পূজিত হয়ে আসছেন মা সবুজ কালী। এখানে সব চেয়ে আকর্ষণীয় ব্যপার হল মা কালীর গায়ের রঙ কচি কলাপাতার মতো সবুজ। এই কালী মাতা বেশ জাগ্রত বলেই অটুট বিশ্বাস এলাকাবাসীর। এই কালী মাতাকে ঘিরেও রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস।

এলাকায় জনশ্রুতি, ৭৩ বছর আগে ১৩৫৭ সালে এই কালী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন বটকৃষ্ণ অধিকারী। তিনি এই শ্রীপতিপুরেরই বাসিন্দা ছিলেন। বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। সেই সময়ে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করে কিছু বছর ভিন রাজ্যে চাকরি করেছিলেন বটকৃষ্ণ অধিকারী। তারপর ভাগ্যচক্রে আবার এই গ্রামেই ফিরে আসেন। এখানে শুরু করেন চাষাবাদ। পরবর্তী সময়ে আঙুরবালা দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তবে সংসার জীবন জাপনে তাঁর আগ্রহ কম ছিল।

তিনি মাঠে-ঘাটে শ্মশানে পর্যন্ত ঘুরে বেড়াতেন। শোনা যায়, একদিন কোনও এক মাঠে তিনি গরুর খুঁট বাঁধছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁর পিছন থেকে এক সাদা বস্ত্র পরিহিত সন্ন্যসী নাকি এসে বলেন "তোমার দীক্ষা হবে"।

Advertisment

বটকৃষ্ণ অধিকারীর নাতি দেবজ্যোতি অধিকারী বলেন, "বটকৃষ্ণ অধিকারী শ্মশানে সাধনা করতে করতে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন। স্বপ্নাদৃষ্ট হয়েই তিনি মা কালীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু গোঁড়া বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম তাঁর। বাড়িতে কেউ তিলক সেবা রাধা-গোবিন্দের নাম না করে জল স্পর্শ করেন না। সেই বৈষ্ণব বাড়িতে কালী পুজো! তৎকালীন সমাজের মোড়লরা আপত্তি করেছিলেন। তবে সব বাধা কাটিয়ে তিনি বাড়িতে কালীর ঘট স্থাপন করেছিলেন।"

আরও পড়ুন- কালীপুজো মিটলেই বঙ্গে কনকনে ঠান্ডা? শীতের সাড়াজাগানো আপডেট জানুন

দেবজ্যোতি অধিকারী আরও বলেন, "মায়ের মূর্তি স্থাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন বটকৃষ্ণ অধিকারী। কৃষ্ণ ও কালীকে একই অঙ্গে বিরাজ করতে দেখেছিলেন। যার গায়ের রং ছিল সবুজ। একদম কচি কলাপাতার মতো। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হলো সবুজ কালী। রটন্তী পূজার দিন প্রতিষ্ঠা করেন এই সবুজ কালী মাকে। এখানে মা পরম বৈষ্ণব। সারা বছর এই বৈষ্ণব বাড়িতে পূজিত হন মা সবুজ কালী।"

এ পুজোয় অদ্ভুত কিছু নিয়ম আছে। গুপ্ত তন্ত্র মতে পুজো হয় এখানে। মা এখানে পঞ্চমুন্ডির আসনের ওপর পূজিত হন। এখানে বলি প্রথার চল নেই। দেবী এবাড়িতে পরম বৈষ্ণব। কপালে তিলক কাটা হয়। যদিও মায়ের ভোগ হয় আমিষ। বিশেষত ইলিশ মাছের ভোগ মায়ের প্রিয়। সাধারণত মা কালীর প্রিয় রং লাল বলে জবা ফুল দিয়ে পুজো করা হলেও এই সবুজ কালীর পুজোর ফুল কিন্তু জুঁই। এই পুজোয় শ্যামা মাকে বাঁশি বাজিয়ে শোনান সেবায়েতরা। মঙ্গলারতির মাধ্যমে পুজো হয়। প্রতিটি অমাবস্যাতেই বহু ভক্ত আসেন মায়ের দর্শনে। মায়ের কাছে প্রার্থনা করে অনেকেই সুফল পেয়েছেন বলে বিশ্বাস গ্রামবাসীদের।

Haripal Sabuj Kali West Bengal Hooghly Kali Puja