করোনা পরিস্থিথিতে বারুইপুর সংশোধনাগারে শুরু হয়েছিল বন্দিদের বিক্ষোভ। তারপর দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেও তুলকালাম ঘটনা ঘটে বন্দি ও নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে। দুদিন আগে ক্ষোভ দাঁনা বাধল উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি সংশোধনাগারেও। করোনা পরিস্থিতিতে এই বন্দি বিক্ষোভ কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে জেল কর্তৃপক্ষের। করোনা পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে ছাড়া পেয়েছে প্রায় ২৩০০ বন্দি। সূত্রের খবর, তা সত্বেও মনে করা হচ্ছে অনেক সংশোধনাগারেই ধারন ক্ষমতার থেকে বেশি বন্দি রয়েছে। তাই কারান্তরালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম কীভাবে মানা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
রাজ্য কারা দফতর সূত্রে খবর, করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় ১৬০০ বন্দি জামিন পেয়েছেন। তাছাড়া সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, প্রায় ৭০০ বন্দি তিন মাসের জন্য প্যারলে মুক্ত হয়েছে। এই সময়ে প্যারল দেওয়ার ক্ষেত্রে ১১ টি বিষয় বিবেচ্য ছিল। সে জন্য অনেককেই প্যারলে মুক্তি দেওয়া যায়নি। যে ১১টে ক্ষেত্রে প্যারল দেওয়া হবে না বলে ঠিক হয় তার মধ্যে রয়েছে- পকসো, নার্কোটিকস কমার্শিয়াল, কিডন্যাপিং, ধর্ষণ বা গণধর্ষণ, গ্যাংস্টার অ্যাক্ট, ইউএপিএ, নারী নিগ্রহ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তিন মাসের প্যারল পাওয়ার শর্তে অনেক বন্দিই কৃতকার্য হয়নি। তাই নানা কারণে করোনা আবহেও জেলের মধ্যে বন্দিদের ভিড় থেকেই যাচ্ছে।
অনেক ক্ষেত্রে তালিকা তৈরি হলেও বেশ কিছু বন্দিকে ছাড়া সম্ভব হয়নি। মূলত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত যেসব বন্দি ১৪ বছর জেল খেটেছেন তাঁদের ছাড়ার কথা বিবেচনা করা হয়েছে। তাছাড়া প্যারল দেওয়ার ক্ষেত্রে বন্দিদের রেকর্ড বা মানসিক অবস্থাও পর্যালোচনা করেন কর্তৃপক্ষ। কোন কোন সাজাপ্রাপ্ত বাইরে গিয়ে ফের সমস্যা তৈরি করবে না, তা বুঝে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সাধারণত প্যারলে মুক্ত বন্দিদের পুলিশ নজরদারিতে রাখে, কিন্তু এখন নানা কারণে পুলিশের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় তা সব ক্ষেত্রে সম্ভব হবে না বলেই মনে কারা হচ্ছে। তাই অধিকতর বিবেচনার পরই মিলেছে প্যারল।
আরও পড়ুন- রেড জোনেই পূর্ব মেদিনীপুর, অরেঞ্জ জোনে যাওয়ার পথের কাঁটা করোনা
কারা দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যে বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় কারাগারেই ধারণ ক্ষমতার থেকে বেশি বন্দি রয়েছে। সূত্রের তথ্য, দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে থাকতে পারেন ২৫০০ থেকে ২৬০০ বন্দি। কিন্তু সেখানে রয়েছেন প্রায় ৪ হাজার বন্দি। বারুইপুর সংশোধনাগারের ধারণ ক্ষমতা ৮০০। কিন্তু সেখানেও রয়েছেন প্রায় সাড়ে ১১০০ বন্দি। বহরমপুর বা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারেও একই দশা। তবে সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি দমদম ও বহরমপুর সংশোধনাগারের। তবে উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা নেই বলেই মনে করে কারা দফতর।
আরও পড়ুন- বাংলায় তিন তারা-চার তারা হোটেলে কোয়ারান্টাইন সেন্টার
সূত্রের খবর, দমদম ও বহরমপুর কারাগারে বিদেশী বন্দির সংখ্য়ার জন্য চাপ বাড়ছে। যেসব বিদেশী বন্দি কাগজপত্র সংক্রান্ত সমস্যার জন্য আটকে রয়েছে, তাদের জন্য ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিল কারা দফতর। কিন্তু সিএএ-এনআরসি আন্দোলনের জেরে তা ভেস্তে যায়। জানা গিয়েছে, দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারেই প্রায় সাড়ে তিনশোর ওপর বিদেশি বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে অধিক সংখ্যক বাংলাদেশী। এখন সেই কাগজপত্র সমস্যা সমাধানের কোনও সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া এই পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের দেশেও ফিরতে পারবেন না। মূলত এই কারণেই দমদম ও বহরমপুর সংশোধনাগারে বাড়তি ভিড় রয়েছে বলে মনে করছেন কারা কর্তারা।
ইতিমধ্যে রাজ্যের তিনটি কারাগারে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বন্দিরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চলেছে, পুলিশকে ফাটাতে হয়েছে কাঁদানে গ্যাসের সেল। এমতাবস্থায় যথেষ্ট সমস্যায় পড়েছে জেল কর্তৃপক্ষ। ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকেও। পরিবারের সদস্যরাও বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন, খাবার দিচ্ছেন তাদের। মোদ্দা কথা জেলের ভিতর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিয়ে বড় রকমের প্রশ্ন উঠছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন