Kolkata Teacher Abused, Attacked and Asked to Resign Post Pulwama Attack: বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষা দেওয়ার যে নীতি প্রদর্শিত হচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়, তার সঙ্গে একমত নন বিজেপি নেতা অদ্বৈত মজুমদার। যাঁরা ভিন্ন মত পোষণ করে মতামত প্রকাশ করছেন, তাঁরা দেশদ্রোহী বলেও মনে করেন না তিনি। দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি মিডিয়া সেলের এই কনভেনর মনে করেন, "এ দেশে যাঁরা বাস করেন, তাঁদের সকলেরই দেশের জন্য আবেগ রয়েছে।"
আরও পড়ুন, কাশ্মীর হামলা নিয়ে ফেসবুক পোস্ট লিখে সাসপেন্ড এলআইসি কর্মী
গত দুদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলওয়ামা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে যাঁরা পোস্ট করেছেন, তাঁদের অনেকেরই আক্রান্ত হওয়ার খবর আসতে শুরু করেছে। বনগাঁর এক শিক্ষক বাড়িছাড়া হয়েছেন। হাবড়ার এক কলেজ ছাত্র গ্রেফতার হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়াও ফেসবুকে বিভিন্ন ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, নিগ্রহ করা হচ্ছে অনেককে। এমনকি যিনি পোস্ট করেছেন, তাঁকে না পেয়ে তাঁর বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
বনগাঁয় বাড়ি, কর্মসূত্রে বিরাটিতে বাস চিত্রদীপ সোমের। ফেসবুক পোস্টের জেরে রবিবার দফায় দফায় তাঁর বাড়িতে হামলা তো হয়েইছে, সোমবার সকালে তাঁর চাকরিও গেছে বলে অভিযোগ করলেন তিনি। চিত্রদীপ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি ফেসবুক পোস্ট করেন। তাঁর বক্তব্য, তিনি সেখানে শহিদ শব্দ ব্যবহার নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন। "আমি এ ব্যাপারে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের করা একটি আরটিআই-য়ের উল্লেখও করেছিলাম, যাতে সরকার জানিয়েছিল, শহিদ শব্দ ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু আমার পোস্টে ভারত সরকারের আরটিআইয়ের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বাকি অংশ তুলে তার স্ক্রিনশট নিয়ে ভাইরাল করে দেওয়া হয়।"
ফেসবুকে 'দেশবিরোধী' পোস্ট করার পরিণাম দেখলো কোচবিহার#PulwamaAttack #PulwamaTerrorAttacks #PulwamaTerroristAttack #KashmirTerror #CRPFJawans #CRPF #WestBengal #coochbehar #Nationalism #AntiNational #Nationalist pic.twitter.com/DsIcX5VVvj
— IE Bangla (@ieBangla) February 18, 2019
চিত্রদীপের বনগাঁর বাড়িতে দুপুরবেলা হানা দেয় একদল জনতা। তারা তাঁকে বাধ্য করে "জয় শ্রীরাম", "পাকিস্তান মুর্দাবাদ" শ্লোগান দিয়ে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে। রবিবার বিকেলেই আরেকটি দল তাঁর বাড়িতে হামলার উদ্দেশ্যে বনগাঁ স্টেডিয়ামে জড়ো হচ্ছে বলে খবর পান তিনি। "শুভানুধ্যায়ীদের ফোন পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি বাড়ি ছেড়ে কলকাতাগামী ট্রেন ধরি। বারাসাত পার হতে না হতেই আমি ফোনে খবর পাই যে আমার বাড়িতে তাণ্ডব শুরু হয়েছে। কোলাপসিবল গেট ভেঙে ফেলা হয়েছে, ভেঙে ফেলা হয়েছে এসি-র উইন্ডোও।"
চিত্রদীপ রাত কাটিয়ে সকালে স্কুলে যোগ দিতে গেলে তাঁকে সেখানে বলা হয়, তাঁর জন্য স্কুলের দুর্নাম হয়েছে। ফলে তাঁকে চাকরি ছাড়তে হবে। "আমাকে বলা হয়, যদি আমি পদত্যাগ করি, তাহলে আমাকে এক্সপিরিয়েন্স সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। নাহলে বরখাস্ত করা হবে, তাতে কোনও সার্টিফিকেট পাব না। আমি পদত্যাগপত্র লিখে জমা দেওয়ার পর আমাকে কোনও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। বলা হয়, তিন মিনিটের মধ্যে স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে।"
এখন চিত্রদীপের আশঙ্কা, তাঁর বিরাটির ফ্ল্যাটেও হামলা হতে পারে। গোটা বিষয়টিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও হতাশ তিনি। বাড়িতে হামলার ঘটনার সময়ে পুলিশকে ফোন করা হলেও, তারা অনেক পরে এসেছে বলে অভিযোগ তাঁর। "কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও আমি খবর পাইনি। বনগাঁ থানায় ইমেল করে অভিযোগ করেছি। সেখান থেকেও কোনও ফোন পাইনি।"
আরও পড়ুন, জৈশ-এ-মহম্মদ কেন পাক গোয়েন্দা সংস্থার নয়নের মণি
চিত্রদীপের স্কুলে এ ব্যাপারে ফোন করা হলে কেউ ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব আসেনি।
এ সব ঘটনা ঠিক নয় বলে মনে করছেন অদ্বৈত মজুমদার। তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, "যাঁরা সেনাবাহিনী বা দেশ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে, দেশ যদি না থাকে, সেনাবাহিনী যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে প্রশ্ন তোলার মত কেউ থাকবে না। যাঁরা এসব কথা বলছেন, তাঁদের আরেকটু ভাবা উচিত।" তাহলে এই যে ঘটনা ঘটছে, তাকে কি নিন্দাজনক বলে অভিহিত করবেন? অদ্বৈত বলছেন, "নিন্দা শব্দটা একটু কড়া হয়ে যাবে। আমি বলতে চাইছি, যাঁরা বাড়ি বাড়ি হামলা করছেন, তাঁরা বাড়াবাড়ি করছেন। তাঁদের বোঝানোর কাজে মন দেওয়া উচিত। বোঝাতে হবে, এখন সব বিভেদ ভুলে পাশাপাশি থাকার সময়।"
এ ব্যাপারে বিজেপি নেতার সঙ্গে একমত বজরং দলের দক্ষিণ কলকাতার দায়িত্বপ্রাপ্ত সুমন কর্মকারও। তিনি বললেন, "বজরং দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলার পক্ষপাতী নয়। আমরা নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে চলেছি, নিয়ে যাব। দু দিন আগেই আমরা একটা মিছিলও করেছি।" যারা এ ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তাদের সঙ্গে বজরং দলের যোগাযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন সুমন।
উত্তর ২৪ পরগণার পুলিশ সুপার সুধাকর রেড্ডিকে চিত্রদীপের বাড়িতে হামলার প্রসঙ্গে সোমবার দুপুরে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, "পুলিশের কাছে অভিযোগ এসেছে। কেস রেজিস্টার করা হচ্ছে।"