শহর থেকে জেলা, প্রাচীন পুজোগুলির নিয়ম-নীতির বিশেষ বদল চোখে পড়ে না। শুধুমাত্র বলি-প্রথার বদল ছাড়া দুর্গাপুজোর পুরনো রীতি-রেওয়াজ অটুট রেখেই বিশেষ করে বনেদি বাড়িগুলিতে চলে দেবী মহমায়ার আরাধনা। পুরনো মালদার জানকি পরিবারের দুর্গাপুজোও তেমনই। ১২৭ বছরের প্রাচীন এই পুজোয় আজও অটুট অতীতের সেই নিয়ম-রেওয়াজ।
প্রাচীন এই পুজোর রীতি-রেওয়াজ…
এখানে দেবী দুর্গার ভোগ হিসেবে নানা ধরনের চকোলেট নিবেদন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি দেওয়া হলেও দেবীর মূল প্রসাদ হচ্ছে এখানে চকোলেট। ১২৭ বছরের পুরনো মালদার জানকী পরিবারের পুজোর এই রীতি আজও নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গেই পালন করে আসছেন এই পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন ১৭ ভাই ও ১৬ বোন। সকলে মিলেই পুজোর আয়োজন করেন। মালদার ইংরেজবাজার শহরের মকদমপুর এলাকার এই পুজো যদিও বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত ঠাকুর দালানেই হয়।
শতাব্দী প্রাচীন এই পুজোর পিছনের ইতিহাস…
এই পুজোর সূচনা হয়েছিল অবিভক্ত বাংলার কানসার্ট গ্রামে। দেশ ভাগের পর ১৯৫৯ সালে জানকী পরিবার মালদায় চলে আসে। পরিবার সহ দেবী দুর্গার কাঠামোর কিছুটা অংশ নিয়ে আসা হয় এখানে। পুজোর প্রতিষ্ঠাতা জানকী নাথ কুণ্ডু। সেই কাঠামোয় পুজো হয়ে আসছে এখনও। প্রতিমা বিসর্জনের পর কাঠামো নিয়ে এসে মন্দিরে রাখা হয়। বছরভর পরিবারের মহিলারা এই কাঠামো পুজো করেন।
পরিবরের এক সদস্য শ্যামল প্রসন্ন কুণ্ডু জানিয়েছেন, পুজোর প্রতিষ্ঠাতা জানকী নাথ কুণ্ডু তাঁর ৯ ছেলে- মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। বর্তমানে পরিবারের পঞ্চম পুরুষেরা অংশগ্রহণ করছেন পুজোয়। মন্দিরেই হয় প্রতিমা তৈরি। পুরনো রীতি মেনেই এখনও পুজো হয়। পরিবারে পুরুষেরা এক সময় মাকে সাজাতেন। তবে বর্তমানে সময়ের অভাবে তা আর হয় না। এখন মৃৎশিল্পী নিজেই প্রতিমাকে সাজান। সপ্তমীর দিন একটি ডালা বসে মন্দিরে। সেই ডালায় তিসির তেলের প্রদীপ জ্বালানো হয়। রীতি রয়েছে নবমী পর্যন্ত এই প্রদীপ নেভানো যাবে না। প্রদীপ নিভলে পরিবারের নাকি অমঙ্গল হবে। তাই পরিবারের সকলে রাত জেগে তিনদিন ব্যাপী এই প্রদীপ নিভতে দেন না।
আরও পড়ুন- কেন মহালয়ার দিনই চক্ষুদানের রীতি, করা হয় চণ্ডীপাঠ?
ওই পরিবারের আরেক সদস্য দীপিকা কুণ্ডু জানিয়েছেন, পুজোয় মিষ্টান্ন প্রসাদ খুব কম দেওয়া হয়। বিভিন্ন রকমের চকোলেট সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত পুজোয় দেওয়া হয়। প্রতিদিন চকোলেটের লুঠ দেওয়া হয়। সঙ্গে অবশ্য খুব অল্প পরিমাণ বাতাসাও দেওয়া হয়। পুজোর সূচনা থেকেই চকোলেট দেওয়া হয়। তবে এখন বিভিন্ন প্রকার চকোলেট বাজারে এসেছে। প্রায় সমস্ত ধরনের চকোলেটই কম-বেশি দেওয়া হয় লুঠে।