Advertisment

মহাষ্টমীতে জমজমাট মহিষাদল রাজবাড়ি! পুরনো রীতি মেনেই দশভুজার আরাধনা

প্রায় ২৫০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই দুর্গাপুজো দেখতে এবারও ভিড় জমে যায় দর্শনার্থীদের।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
Purba Medinipur Mahishadal Rajbari Durga Puja 2023

মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো।

মহিষাদল রাজবাড়িতে মহাষ্টমীর পুজোয় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। আগেকার সেই জৌলুস, আড়ম্বর আজ অনেকটাই কমে গিয়েছে। কিন্তু নিয়ম মেনেই প্রতিপদে ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। আজ মহাষ্টমীর সকালে পরিবারে সব সদস্যরা হাজির পুষ্পাঞ্জলি দিতে। পুষ্পাঞ্জলির ভিড়ে সামিল বহু দর্শনার্থীও। প্রথা মেনে নিষ্ঠা ভরে রাজবাড়িতে দেবী দুর্গার আরাধনা। প্রায় ২৫০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই দুর্গাপুজো দেখতে ফি বারের মতো এবারও পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি ভিড় ভিন জেলার দর্শনার্থীদেরও।

Advertisment

মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস…

রানি জানকীর আমলে আনুমানিক ১৭৭৬ সালে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়। সেই সময় থেকেই রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। রাজত্ব চলে যাওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর জৌলুস কমেছে। কিন্তু, নিয়ম-আচারে ছেদ পড়েনি। তাই প্রথা অনুযায়ী মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদের দিন ঘট স্থাপন করে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনা হয়ে গিয়েছিল।

মহালয়ার পরের দিন রাজবাড়ির দুর্গামণ্ডপ লাগোয়া অশ্বত্থ গাছের তলায় নটি ঘট ওঠে। ষষ্ঠী থেকে ঘটপুজো শুরু হয়ে যায়। সপ্তমী থেকে মূর্তি পুজো শুরু হয়েছে। পুরনো রীতি মেনে প্রতিমার একপাশে ঘট, অন্যপাশে ধান রাখা হয়েছে। এই দুর্গাপুজো করার পরই শুষ্ক গ্রামে ধান ফলেছিল। তাই ভালো ফসলের আশায় আজও দেবীর পাশে ধান রাখা হয়। এই ধনের বীজের অঙ্কুর থেকেই নাকি পূর্বাভাস পাওয়া যায় এলাকায় ফসল কেমন হবে।

মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় ভোগ নিবেদনের প্রাচীন রীতি…

পুজোর দিন অনুযায়ী ভোগ রান্না হত। যেমন, ষষ্ঠীতে ছয় মন, সপ্তমীতে সাত মন, অষ্টমীতে আট মন, নবমীতে নয় মন চালের প্রসাদ তৈরি করে বিতরণ করা হত। এখন তা আর সম্ভব হয় না। অষ্টমীর সন্ধ্যায় কামান দেগে রাজবাড়ি সহ আশপাশের এলাকার পুজোমণ্ডপে সন্ধিপুজো শুরু হবে। দশমীতে বড় নৌকায় করে শোভাযাত্রা আগে বেরতো এবং রাজবাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া হিজলি টাইডাল ক্যানাল হয়ে গেঁওখালিতে রূপনারায়ণ নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত।

আরও পড়ুন- ধুয়ে মুছে সাফ দ্বন্দ্ব, মহাষ্টমীতে কুণালের পাড়ার পুজোয় পুষ্পাঞ্জলি রাজ্যপালের

এখন সে সবই অতীত। রাজত্ব ঘোচার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রাপালা বন্ধ হয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে অবশ্য এখনও ভোগ রান্না করা হয়। কিন্তু তা যৎসামান্য।পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবি গান হলেও এখন আর হয় না যাত্রাপালা।

এখন কামান দাগার পরিবর্তে আতসবাজির রোশনাইয়ের মধ্য দিয়ে মহিষাদল রাজবাড়িতে সন্ধিপুজো করা হয়। বিসর্জনের শোভাযাত্রাও অতীত। রাজবাড়ি লাগোয়া রাজদিঘিতেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। তবে আড়ম্বর কমলেও ঐতিহ্যের টানে আজও বহু মানুষ মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় সামিল হন।

আরও পড়ুন- বঙ্গতনয়ার অবিস্মরণীয় কীর্তি! ‘সেরার সেরা’ শিরোপা ছুঁয়ে বাংলার মুখ উজ্বল করলেন অনুষ্কা

মহিষাদল রাজ পরিবারের এক সদস্য বলেন, "এটা আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য। আমরা এটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি। গোটা মহিষাদলের লোকজন এই পুজো ভালোবাসেন। বাইরে থেকেও অনেকে আসেন। আমাদের খুব ভালো লাগে। একসময় এখানে নাটক হতো, এখন তা আর হয় না। সময়ের সঙ্গে সব কিছু অনেক বদলে গেছে। তবে পুজোর প্রাচীন রীতি আমরা ধরে রেখেছি। রাজবাড়ির পর্যটনের দিকটা আরও উন্নত করা হবে।"

আরও পড়ুন- দুর্যোগের ছায়া দুর্গাপুজোয়! শারদ আনন্দ ভেস্তে দিতে কোন কোন জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা?

West Bengal Purba Medinipur durgapuja 2023 Mahishadal Rajbari Durga Puja
Advertisment