শহর থেকে জেলা, বারোয়ারি কিংবা বাড়ির পুজো…বহু পুজোতেই একটি নিজস্বতা থাকে। বিশেষ করে বনেদি বাড়ি বা জমিদার বাড়িগুলিতে পুরনো রীতি-রেওয়াজ মেনে চলে দেবী মহামায়ার আরাধনা। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের পঁচেটগড় জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোরও নিজস্ব একটি ধরণ আছে।
পঁচেটগড় রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস…
দেবী এখানে মাটির প্রতিমা নন, এই রাজবাড়িতে দশভুজা পূজিত হন পটে আঁকা চিত্রে। আগে মহালয়া থেকে পুজো শুরু হয়ে যেত। তবে বর্তমানে রাজ আমল থেকে শুরু হওয়া এই পুজো ষষ্ঠী থেকেই শুরু হয়। পুজো ঘিরে সাজো-সাজো রব পড়ে যায় পঁচেটগড় রাজবাড়ির দুর্গা দালানে।
ইতিহাসের পাতা ওলটালে দেখা যাবে, প্রায় ৫০০ বছর আগে পঁচেটগড় রাজবাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো। যদিও সেই সময়কাল নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। ওড়িশার কটকের আটঘর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন এবাড়ির আদিপুরুষ কালুমুরারি মোহন দাস মহাপাত্র। এই দুঃসাহসিক যুবক আকবরের রাজ কর্মচারী ছিলেন। ওড়িশার রাজা মুকুন্দদেব আকবরের সঙ্গে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে উভয়ের শত্রু গৌড়ের রাজা গৌড়েশ্বর সুলেমন কররানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হন। সেই যুদ্ধে কালুমুরারির অসামান্য কৃতিত্ব প্রকাশ পায়।
রাজবাড়ির ঠাকুরদালান।
কথিত আছে, সেই সময় পটাশপুর পরগনায় এসে বাদশাহ প্রদত্ত নানকর ভূমি লাভ করে জমিদারির সূচনা করেন কালুমুরারি। প্রথমে কল্যাণপুরে থাকতেন। পরে পঁচেট গ্রামে খাঁড়ে বিশাল গড় তৈরি করেন তিনি। পরবর্তীকালে সেখান থেকে উদ্ধার হয় এক শিবলিঙ্গ। সেই শিবলিঙ্গকে কেন্দ্র করে কালুমুরারি মোহন দাস মহাপাত্র তৈরি করেন পঞ্চেশ্বর মন্দির। এখানে বেনারস থেকে আরও চারটি শিবলিঙ্গ এনে স্থাপন করা হয়। ধীরে ধীরে পঞ্চেশ্বর নামটির প্রচার হতে থাকে। সে সময় রাজবাড়িতে শক্তি সাধনা হত। সেই শক্তি সাধনা করতে গিয়ে শুরু হয় দুর্গাপুজো।
আরও পড়ুন- বাংলার দুই যুবকের চরম পরিণতি গুজরাটে! কপাল চাপড়ে অদৃষ্টকেই দুষছে পরিবার!
এই পটচিত্রেই পুজো হয়।
কেন এই রাজবাড়িতে মূর্তি পুজো বন্ধ হয়ে যায়?
রাজাদের রাজত্ব আর নেই। রাজত্ব না থাকলেও রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় অটুট প্রাচীন ধারা। পুরনো নিয়ম মেনেই আজও পুজো হয়। প্রতি বছর ষষ্ঠীতে ঢাক, ঢোল, কাঁসর, ঘন্টা ধ্বনি সহযোগে পঁচেটগড় রাজবাড়ির প্রাচীন পুকুর থেকে দুর্গাপুজোর ঘট স্থাপন করা হয়। মূলত ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চলে রাজবাড়ির পুজো। তবে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে বাড়ির পূজোয়। রাজ পরিবার শৈব থেকে বৈষ্ণব হয়েছে। ফলে এক অলৌকিক কারণে বন্ধ হয়ে যায় মূর্তিপুজো।
জমিদার বাড়িতে শোলা ও পটে আঁকা দুর্গাপুজোর শুরু তখন থেকেই। এখন অবশ্য শোলা বাদ পড়েছে। নেই সেই পটে আঁকা দুর্গা। আগে বলি দেওয়া হলেও এখন সেই প্রথাও বন্ধ। বছরের অন্যান্য দিনগুলো রাজবাড়ির বর্তমান সদস্যরা বাইরে থাকলেও পুজোর কয়েকটা দিন বাড়িতে ফিরে আসেন। ষষ্ঠী থেকে দশমী এলাকাবাসীর ভিড়ে গমগম করে রাজবাড়ি।